খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারই শুধু নয়, নজরদারির অভাবে হাওড়ার অধিকাংশ বাজারও কার্যত বিপদের দিন গুনছে! অভিযোগ, এই সব বাজারে বছরের পর বছর হয় না কোনও ফায়ার অডিট, থাকে না কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা, চলে না প্রশাসনিক কোনও নজরদারিও। যার জেরে হাওড়ার বিভিন্ন আনাজ বাজার, মাছ বাজার বা মঙ্গলাহাট কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। যে জতুগৃহে আচমকা আগুন লেগে গেলে খিদিরপুরের থেকেও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন দমকল দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরাই।
হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর নীচে, এক পাশে রয়েছে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মাছের আড়ত। অন্য পাশে আনাজের বাজার। সেই বাজারগুলিতে কোথাও আগুন জ্বেলে রান্না হচ্ছে স্টোভে বা গ্যাসে, যার পাশেই রয়েছে ডাঁই করে রাখা প্লাস্টিক ও থার্মোকলের প্যাকিং বাক্স, পিসবোর্ডের কার্টন। এরই মধ্যে সেতুর নীচে গোটা এলাকা জুড়ে গজিয়ে উঠেছে আড়তদারদের স্টল।
কেএমডিএ-র এক পদস্থ কর্তা বললেন, ‘‘সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে স্টল তৈরি করে ওই ব্যবসা চলছে। সেখানে না আছে কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা, না আছে আপৎকালীন জলাধার। আগুন লেগে গেলে তা ভয়াবহ আকার নেবে। এ ব্যাপারে দমকল, পুরসভা ও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কিছু করার নেই।’’
শুধু হাওড়া স্টেশন লাগোয়া এই দু’টি বাজারই নয়, একই অবস্থা হাওড়া শহরের ভিতরে পুরসভার নিয়ন্ত্রণে থাকা বাজারগুলিরও। সেই সব বাজারের কোথাও ভিতরে ঢোকার রাস্তা মাত্র ফুট তিনেকের। অভিযোগ, সেই সঙ্কীর্ণ রাস্তার উপরেই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে অজস্র বিদ্যুৎবাহী তার। কোথাও আবার প্লাস্টিকের ত্রিপল টাঙিয়ে বা অস্থায়ী বাঁশের খাঁচা তৈরি করে তারই নীচে চলছে কেনাবেচা। একই চিত্র সালকিয়ার হরগঞ্জ বাজার, নতুন বাজার, কালীবাবুর বাজার, কদমতলা বাজার এবং মঙ্গলাহাটের।
গত কয়েক বছরের মধ্যে দু’বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলাহাটে। অথচ, যে ১১টি বাড়িতে মঙ্গলাহাট চলে, তার সব ক’টিতেই বহু বছর ফায়ার অডিট হয়নি। সপ্তাহে তিন দিন ধরে চলা ওই হাটে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। অথচ অভিযোগ, সেখানকার পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা খতিয়ে দেখে না প্রশাসন। অগ্নি-নিরাপত্তার পরোয়া না করে সর্বত্রই প্লাস্টিক, বাঁশ আর কাঠ দিয়ে পিসবোর্ডের বাক্সে ভরা জতুগৃহ তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। দীর্ঘদিনের পুরনো বিদ্যুতের লাইন না পাল্টানোয় তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
হাওড়ার এই বাজারগুলি নিয়ে হাওড়ার দমকল দফতরের বিভাগীয় ফায়ার অফিসার রঞ্জনকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষের সচেতনতার অভাবেই এই সব জতুগৃহ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে কিছু ব্যবসায়ী এই জতুগৃহ তৈরি করছেন। বার বার নির্দেশ দেওয়ার পরেও কানে তুলছেন না কেউ।’’ তবে গত মাসে হাওড়ার মঙ্গলাহাটে একটি চারতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পরে জেলা প্রশাসন নড়চড়ে বসেছে বলে দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে। দমকলের এক পদস্থ কর্তা জানান, জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়ার নির্দেশে দমকল, পুরসভা, পুলিশ একত্রে হাটের ভবনগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা শুরু করেছে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)