প্রতিমা তৈরি দেখছে দুই খুদে (বাঁ দিকে)। গত বছরের পুজোর একটি মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র।
দশমী আনে বিষাদ। আর এমন বিষাদের দিনে সিঁদুর খেলার রীতি নেই সাঁকরাইলের পালবাড়ির পুজোয়। এখানে সিঁদুর খেলা হয় অষ্টমীতে। প্রায় দু’শো বছর ধরেই এমন রেওয়াজ এই পুজোর।
পালবাড়ির সদস্যেরা জানান, আনুমানিক ১৮২০ সালে এই বাড়িতে শুরু হয় বৈষ্ণব মতে দেবী দুর্গার আরাধনা। আন্দুল রাজাদের দেওয়ান চূড়ামণি পাল, রাজগঞ্জে গঙ্গার ধারে তৈরি করেছিলেন অট্টালিকা। সেখানে এক ধারে দুর্গামণ্ডপ, মণ্ডপের সামনে প্রসস্থ উঠোন এবং তিন দিক ঘেরা বারান্দা। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষা লাভ করে গঙ্গার পাড়ে ইটভাটা গড়ে তুলেছিলেন এই বংশের কৃতী সন্তান নফরচন্দ্র (এন সি) পাল। সে সময়ে এন সি পালের ইটের সুনাম ছিল। ব্যবহার করত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও। ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল পুজোর বহরে।
পারিবারিক প্রথা মেনে জন্মাষ্টমীর দিন দেবীর কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। ষষ্ঠীতে প্রতিমার বোধন। পুজোর ব্রাহ্মণ থেকে ঢাকি— সকলেই বংশ পরম্পরায় এই বাড়ির পুজোর সঙ্গে যুক্ত। তবে বছর পঁচিশ আগে প্রথম তাল কাটে। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রতিমা শিল্পীর। তার পরবর্তী প্রজন্মের কেউ আর প্রতিমা তৈরিতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই এখন ওই বাড়ির প্রতিমা বানান অন্য পটুয়া।
দশমীতে দেবীর বিসর্জনের আগে বরণের প্রথা রয়েছে। তবে সে দিন কোনও সিঁদুর খেলা হয় না। বাড়ির এক সদস্য বলেন, ‘‘মায়ের চলে যাওয়ার মুহূর্তে এত খারাপ লাগে! তাই আমাদের বাড়িতে সিঁদুর খেলা হয় অষ্টমীতে।’’ বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে যোগ দেন পড়শিরাও।
আন্দুলে এই পরিবারের বড় দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। তার আয়েই পুজো, রথযাত্রা প্রভৃতি উৎসবের ব্যয় নির্বাহ হয়। পুজোর দিনগুলিতে বাড়ি হয়ে ওঠে মিলন মেলা। তবে এখন লোকবল অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে আক্ষেপ বাড়ির সদস্যদের। তবু তাঁদের বিশ্বাস, এতে পুজোর আয়োজনে খামতি থাকবে না। ছেদ পড়বে না পুজোতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy