E-Paper

পঞ্চায়েতের হাতে প্রচুর অর্থ ও ক্ষমতা, ব্যবহারের লোক কোথায়?

গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে কয়েক শতাব্দী ধরে কিছু জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান গড়ে উঠেছিল। যথা নবদ্বীপ, কালনা গুপ্তিপাড়া, ত্রিবেণী।

ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৫
সেজে উঠেছে সবুজ দ্বীপ। ছবি: বিশ্বজিৎ মণ্ডল।

সেজে উঠেছে সবুজ দ্বীপ। ছবি: বিশ্বজিৎ মণ্ডল।

পঞ্চায়েত ভোট কয়েক দিন পরে। তার কয়েক মাস আগে থেকেই হুগলির জিরাট-বলাগড় সংবাদ শিরোনামে। আমাদের মতো বলাগড়ের বয়স্ক মানুষজন স্বভাবতই চমকে উঠছেন এই সব সংবাদে। বিশেষ করে যাঁরা এখন গ্রাম থেকে দূরে থাকেন। যাঁরা গ্রামে আছেন তাঁদের হয়তো এই পরিবর্তন অনেকটাই সয়ে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা দূরে আছেন, তাদের মনে আঁকা আছে ষাট-সত্তরের দশকের পুরনো ছবি, যার সঙ্গে আজকের বলাগড়ের মিল সামান্যই।

গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে কয়েক শতাব্দী ধরে কিছু জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান গড়ে উঠেছিল। যথা নবদ্বীপ, কালনা গুপ্তিপাড়া, ত্রিবেণী। অতটা বিখ্যাত না হলেও জিরাট, কালিয়াগড়, বলাগড়, শ্রীপুর, পাটুলিগ্রাম এই পাশাপাশি গ্রামগুলি তারই মাঝে নিজস্বতা নিয়ে উজ্জ্বল ছিল। ১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী বহু গ্রামের মধ্যে একমাত্র স্কুল ছিল। বিদ্যাসাগর মশাই এই স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন জলপথে। জিরাট তো স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাসভূমি। বলাগড় গ্রামে মোহিতলাল মজুমদারের ছেলেবেলা কেটেছিল। বলাগড় নৌ শিল্পের জন্যও বিখ্যাত।

প্রতিটি গ্রামে নিজেদের লাইব্রেরি ছিল। ছিল প্রতিটি গ্রামের ফুটবল দল। যাত্রা থিয়েটার হত নিয়মিত। সেগুলির মানও ছিল বেশ উঁচু। সরস্বতী পুজোর পর গ্রামের সব ঠাকুর বিসর্জন হত মিছিল করে সরস্বতী বন্দনা করে গান গাইতে গাইতে। রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতেন এই অভিনব শোভাযাত্রা দেখার জন্যে। এ সব ষাট-সত্তর দশকের গল্প।

গ্রামের চরিত্র বদলে গেল আশির দশক থেকে। গ্রাম শহরের প্রভেদটা বেড়ে গেল। শহরে বাস করলে সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ বেশি। সঙ্গে চিকিৎসা এবং নানা নাগরিক সুযোগ সুবিধা। শিক্ষিত মানুষরা একে একে গ্রাম ছেড়ে শহরে সরে যেতে লাগলেন। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলির সাংস্কৃতিক মানও কমে গেল।

লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেল। খেলাধুলো হয় না, সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্ম অন্য রকম হয়ে গেল। ধীরে ধীরে পঞ্চায়েতের হাতে প্রচুর অর্থ ও ক্ষমতা এল। কিন্তু সেই অর্থ ও ক্ষমতা ব্যবহার করার মতো শিক্ষিত সামাজিক রাজনৈতিক কর্মীর অভাব ঘটল গ্রামগুলিতে। জায়গা দখল করে নিল স্বার্থান্বেষী মানুষের দল। কিছু মানুষ অবশ্যই চেষ্টা করে চলেছেন নিজেদের সাধ্যমতো। কিন্তু অর্থ ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে তাঁদের প্রচেষ্টা সফল হয় না।

ফলে যা হবার তাই হয়েছে। জিরাট বলাগড় ইদানিং ‘বিখ্যাত’ হয়েছে। কিন্তু প্রবীণ মানুষেরা গ্রামে গিয়ে আর চিনতে পারেন না তাঁদের ফেলে আসা গ্রাম।প্রতিবেদক অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Balagarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy