সরকারি নির্দেশমতো নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলিতে কোভিড-শয্যা বেড়েছে। কিন্তু যে হারে এ বার অক্সিজেনের মাত্রা কমে সংক্রমিতদের অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে, তাতে আইসিউ শয্যা বাড়ানো হলেও কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে সব মহলেই। ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমিতদের একাধিক হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে, আইসিইউ খালি নেই।
অনেক চেষ্টাচরিত্র করে রিষড়ার কোভিড আক্রান্ত এক মহিলা শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি হতে পেরেছেন। তাঁর অক্সিজেন চলছে। শ্রমজীবীতে করোনা চিকিৎসা চালু হয় শুক্রবার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আইসিইউ ভরে যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বহু মানুষ রোগী ভর্তির জন্য ফোন করছেন। অধিকাংশেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম। রোগী ভর্তিতে এখানেই সমস্যায় পড়েছে ওই হাসপাতাল।
কেন?
হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকারের বক্তব্য, এখানকার কোভিড-ওয়ার্ডে এখন ৬২টি শয্যা। তার মধ্যে ২৬টি আইসিইউ শয্যা। অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় অনেকেরই আইসিইউ প্রয়োজন। কিন্তু ওই শয্যা খালি না-থাকায় নতুন করে জটিল রোগীর অনুরোধ এলে অন্যত্র ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একাধিক ক্ষেত্রে রোগীর পরিবার অন্যত্র ব্যবস্থা করতে না পারায় শ্রমজীবীতে সাধারণ শয্যাতেই ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, আইসিইউ শয্যা যথেষ্ট সংখ্যায় বাড়াতে হবে।
হাওড়ার সাঁতরাগাছির এক প্রৌঢ়ের গত শনিবার থেকে জ্বর হয়। আত্মীয়েরা জানান, তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা কম ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথমে বাড়িতেই অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর কিডনির চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির লোকেরা তাঁকে সেখানে নিয়ে যান। কিন্তু শয্যা নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে আত্মীয়েরা তাঁকে কলকাতার আরও দু’টি নামী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়েও ব্যর্থ হন। শ্রীরামপুর শ্রমজীবীতে যোগাযোগ করা হলেও আইসিইউ শয্যার অভাবে ভর্তি নেওয়া যায়নি। করোনা পরীক্ষা না-হওয়ায় চেষ্টা করেও সরকারি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো যায়নি। শেষে, শুক্রবার সকালে তাঁকে সাঁতরাগাছিতেই একটি নার্সিংহোমের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। শনিবার সকালে তিনি মারা যান।
মৃতের এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছির নার্সিংহোমে কাকুর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বুঝতে পারব, করোনা হয়েছিল কিনা। শয্যার কতটা সঙ্কট, বুঝতে পারলাম।’’ করোনার প্রথম পর্বে গত অক্টোবরে হুগলিতে কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার আকাল হয়েছিল। এ বারেও চিকিৎসকদের একাংশ এই আশঙ্কা তো করছেনই, তাঁরা বলছেন এ বার পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে। কারণ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। সংক্রমণ অনেক বেশি হওয়ায় গত বারের থেকে হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা অনেক বেড়েছে। তাঁদের একাংশ হাসপাতালে আসছেন সঙ্কটজনক অবস্থায়।
শ্রমজীবী হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক কুণাল দত্ত বলেন, ‘‘এ বারের পরিস্থিতি যে আরও বেশি জটিল, ভালই টের পাচ্ছি। সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বাঁচাতে যথাসম্ভব বেশি আইসিইউ শয্যা দরকার।’’
হুগলি জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশও একমত। তাঁদের বক্তব্য, করোনা চিকিৎসায় জেলার সরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ছ’শোর বেশি শয্যা চালু হয়েছে। তার মধ্যে আইসিইউ শয্যা দেড়শোর বেশি। আরও কিছু হচ্ছে। কিন্তু যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে এই সংখ্যাতেও রোগীর চাপ কতটা সামলানো যাবে, সেই প্রশ্ন উঠছেই।