পাথর ও বালি-ইট পড়ে রয়েছে উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোডের ধান্দালি মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা দখল করে পড়ে থাকছে ইট, বালি, পাথরের স্তূপ। সে কারও ব্যক্তিগত বাড়ি তৈরির কাজেই হোক বা ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসার জন্য। হাওড়া জেলার অন্যতম দুই পর্যটনকেন্দ্র— গড়চুমুক ও গাদিয়াড়া যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটিতে (উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোড) প্রায় দিনই ওই সব ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকার জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তাটি কার্যত ‘মরণফাঁদ’ হয়ে উঠলেও প্রশাসনের হুঁশ নেই বলে অভিযোগ। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাতায়াত। এর মধ্যে আবার রাস্তার কাজও চলছে।
উলুবেড়িয়া থেকে রাস্তাটি গাদিয়াড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। লম্বায় প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। শ্যামপুর থেকে উলুবেড়িয়া এবং হাওড়া শহরে যাওয়ারও একমাত্র রাস্তা এটি। যত্রতত্র ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকার জন্য মোটরবাইক আরোহীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। পুলিশেরই একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত এক মাসে এই রাস্তায় অন্তত ৩৫টি বাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে প্রাণ হারিয়েছেন আট জন। এলাকাবাসী প্রতিবাদে একাধিকবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। দু’দিন আগেই ওই রাস্তার ধান্দালি-হাতিপাড়ায় একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় বাইক আরোহী তিন যুবকের। সোমবার সেই গাড়ি ও তার চালককে গ্রেফতারের দাবিতে ধান্দালি মোড়ে অবরোধ করে গ্রামবাসী। অবরোধস্থলের দু’পাশে রাস্তায় পড়ে ছিল বালি, পাথর, ইট। অবরোধকারীরা সে সব সরানোর দাবিও তুলেছিলেন। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু বুধবারেও সেখানে দেখা গেল ওই সব ইমারতি দ্রব্য পড়ে রয়েছে। এর জেরে যানজটও হচ্ছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের মদতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ওই সব ইমারতি দ্রব্য রাস্তায় জমা করছেন। শ্যামমপুর-১ ব্লকের বেলাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান শিখা প্রামাণিক বলেন, ‘‘ওখানে রাস্তার কাজ চলছে। তাই ঠিকাদাররা হয়তো বালি, পাথর, ইট রেখেছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঠিকাদারকে বলব, অতি দ্রুত রাস্তা থেকে ওই সব মালপত্র সরিয়ে নিতে। আর অন্য কোথাও ইমারতি দ্রব্য পড়ে আছে কি না, জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) শমীককুমার ঘোষ বলেন, ‘‘রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য না ফেলার জন্য বহুবার মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। এ বার পূর্ত দফতরকে জানানো হবে, তারা যেন বিষয়টি নজরে রাখে। এ ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আবারও মাইকে প্রচার চালানো হবে। তারপরেও শোনা না হলে সংস্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় যে সব ব্যবসায়ী ইমারতি সরঞ্জাম রাখছেন, বহুবার তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। এ বার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
কেন রাস্তাতেই ইট-বালি জমা করা হয়?
শ্যামপুরের এক ইট-বালির ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায় অনেকখানি জায়গা লাগে। সেই জায়গা রাস্তার ধারেই প্রয়োজন। কারণ, ও সব জিনিস ট্রাকে আনতে হয়। ট্রাক গ্রামের রাস্তায় ঢোকে না। তাই রাস্তার ধারেই ট্রাক থেকে নামানো হয়। তবে, রাস্তার উপরে ও সব ফেলে রাখা ঠিক নয়। আমরা রাখি না। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী এ সবের তোয়াক্কা করেন না। সেখানেই বিপদ ঘটে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy