Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
World Environment Day

প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ আর কবে হবে? পরিবেশ দিবসে প্রশ্ন

উলুবেড়িয়া শহরে অবাধে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। 

Plastic is harming the environment

এখনও বাজারে রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। আরামবাগ পুরাতন বাজারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া, আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ০৭:৩৫
Share: Save:

আরও বেশি গাছ লাগাতে হবে। এসির ব্যবহার কমাতে হবে। সবুজ ধ্বংসের পরিমাণ কমানোর কথা, সোমবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসের নানা অনুষ্ঠানে উঠে এল বারবার। হাওড়া ও হুগলি দুই জেলাতেই ঘটা করে চলল চারাগাছ বিলি। চলতি বছরের থিম ছিল, ‘প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ’। কিন্তু দু’জেলার অধিকাংশ জায়গাতেই গত কয়েক বছরের চেষ্টাতেও কি প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ করা গেল, উঠেছে সেই প্রশ্ন।

উলুবেড়িয়া শহরে অবাধে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের আশঙ্কা, যে ভাবে ব্যবহৃত নিষিদ্ধ প্লাস্টিক যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে তাতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিকাশি ব্যবস্থার। সেগুলি বুজে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার সময়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা নিষিদ্ধ প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ।

উলুবেড়িয়া শহরের বিভিন্ন দোকান-বাজারে ঘুরে দেখা গেল রমরমিয়ে ব্যবহার চলছে পাতলা প্লাস্টিকের। দোকানিদের বক্তব্য, তাঁরা বারবার খদ্দেরদের বাড়ি থেকে কাপড়ের ব্যাগ আনতে বলেন। কিন্তু তাঁরা তা আনেন না। অন্য দিকে, ৭৫ মাইক্রনের বেশি ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যাগ দিতে গেলে লোকসান বেশি। তাই দিতে হয় পাতলা প্লাস্টিকই।

পুরসভার তরফে বাজারে অভিযান চলে। জরিমানাও করা হয়। কিন্তু নজদারি কমলেই বেরোয় ফের সেই পাতলা প্লাস্টিক। পুরপ্রধান অভয় দাস অবশ্য দাবি করেন, অভিযান চলছে। বরং তিনি জোর দিয়েছেন মানুষের সচেতনতার উপরে। তাঁর কথায়, ‘‘বাজারে দোকানে আসার সময়ে তাঁরা একটা থলে আনতে পারেন না? তবে সচেতনতা বেড়েছে।’’

পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জয়িতা কুন্ডুও স্বীকার করেন, ‘‘সাধারণ মানুষ সচেতন হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি কমে যাবে। সেই সচেতনতা আসতে এখনও ঢের দেরি।’’

হুগলি জেলার মধ্যে একমাত্র উত্তরপাড়া পুরসভা এলাকায় নিজেদের কড়াকড়ি অবস্থান জারি রাখায় প্লাস্টিক ব্যবহার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। উত্তরপাড়ায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প করা হয়েছে জানিয়ে পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, “আমরা কোনও দোকানে প্লাস্টিক দেখলেই জরিমানা করি। সাধারণ জঞ্জাল রাস্তায় ফেললেও জরিমানা নেওয়া হয়।”

অন্য দিকে, প্লাস্টিক ব্যবহার করলে কড়া অবস্থান থেকে সরে আসা পুরপ্রধানদের মধ্যে আরামবাগের পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারী বলেন, ‘‘জরিমানাতে কোনও কাজ হচ্ছে না। তাই মানুষকে ধারাবাহিক ভাবে সচেতন করার চেষ্টা চলছে।” তাছাড়া আরামবাগে এখনও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও গড়ে ওঠেনি বলেও জানান তিনি।

পুরসভা এলাকাগুলিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি সংস্কার আধিকারিক ভাস্কর মজুমদার জানান, ২০১৬ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইন অনুযায়ী প্রত্যেক পুরসভাকেই একটা করে জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। ইতিমধ্যে ১১টি (১টি কর্পোরেশন সহ) পুরসভা এলাকায় সেই জায়গা চিহ্নিত এবং চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বাকি ডানকুনি, তারকেশ্বর এবং আরামবাগে জায়গা চিহ্নিত হয়ে আছে।

আবার পঞ্চায়েতগুলির ক্ষেত্রে বিডিওরা জানিয়েছেন, শহরে নিয়ন্ত্রণ হলেই গ্রামে প্লাস্টিক সরবরাহ কমে যাবে। এখনই জরিমানা বা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হয়নি। গ্রামবাসীদের সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে প্রচার চলছে। সর্বত্র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে জায়গা খোঁজা চলছে।

২০১৭ সালের গোড়ায় প্রতিটি পঞ্চায়েতে কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাষণ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি নির্দেশিকা দেওয়া হয়। কিন্তু গত ছ’বছরে জেলার ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র খান তিনেক পঞ্চায়েত (শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েত, রাজবলহাট-১ পঞ্চায়েত এবং চন্দ্রহাটি-১ পঞ্চায়েতে) প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে পেরেছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “জমির অভাবে প্রকল্পটা গতি পাচ্ছে না। তবে দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু

করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

plastics Uluberia Arambagh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE