Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Child Marriage

দোকানে বালিকা-বধূকে লুকিয়েও শেষরক্ষা হল না

গত রবিবার বড়ার বাসিন্দা বছর তেইশের এক যুবকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়। যুবকটি টোটো চালায়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রকাশ পাল
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৭:৩১
Share: Save:

তালাবন্ধ দোকানঘরে আলো-পাখা নেভানো। ভিতরে চুপটি করে বসে সাড়ে ১৩ বছরের বালিকা-বধূ!

সিঙ্গুরের বড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে বুধবার মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গেলে তার শাশুড়ি পুলিশ প্রশাসন এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করার প্রবল চেষ্টা করেছিলেন। মেয়েটিকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। শাড়ি ও শাঁখা-সিঁদুর পরা মেয়েটিকে তাঁরা উদ্ধার করেন। তাকে হোমে পাঠানো হয়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, মেয়েটির বাড়ি রিষড়া পঞ্চায়েত এলাকায়। সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা মারা গিয়েছেন। মা ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালান। বছর নয়েকের একটি ভাইও রয়েছে মেয়েটির। গত রবিবার বড়ার বাসিন্দা বছর তেইশের এক যুবকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়। যুবকটি টোটো চালায়।

ওই নাবালিকার বিয়ের খবর সূত্র মারফত চাইল্ড লাইনে পৌঁছেছিল। বুধবার দুপুরে সিঙ্গুরের ব্লক সমাজকল্যাণ আধিকারিক মিতালি জানা, চাইল্ড লাইনের আধিকারিক মনোজ দাস এবং বড়া বিট হাউসের পুলিশ যুবকের বাড়িতে যান। তাঁরা যুবকের খোঁজ করেন। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর মা ছিলেন। তিনি জানান, তাঁরা ভুল ঠিকানায় এসেছেন। ওই আধিকারিকরা অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, সঠিক ঠিকানাতেই এসেছেন। তখন ফের তাঁরা ওই বাড়িতে যান। বাড়িতে নাবালিকা বধূ আছে কিনা জানতে চান। ছেলেটির মা তা-ও অস্বীকার করেন। এর পরে তাঁরা তাঁকে ছেলের আধার কার্ড দেখাতে বলেন। ওই কার্ড আনতে মহিলা বাড়িতে ঢুকতেই পিছন পিছন ওই আধিকারিকরাও ঢুকে পড়েন। শেষে বাড়ি লাগোয়া দোকানঘরে মেয়েটিকে পাওয়া যায়। মহিলা অবশ্য প্রথমে দোকানঘরের তালা খুলতে রাজি হননি।

ওই বালিকা এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে মেয়েটির বাড়ির লোকেরাও চলে আসেন। তাঁরা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানান। মেয়েটিকে ‘ভার্চুয়াল’ পদ্ধতিতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে হাজির করানো হয়। কমিটি তাকে হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

চাইল্ড লাইনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, নাবালিকা বিয়ে যে আইনত নিষিদ্ধ, ছেলেটির বাড়ির লোকেরা তা জানতেন। তাই পুলিশ দেখে ছেলেটির মা ‘ঠিকানা ভুল’ বলে তাঁদের ঘুরিয়ে দেন। তার পরেই নাবালিকা পুত্রবধূকে দোকানঘরে ‘লুকিয়ে’ ফেলেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে যুবকটির বিয়ে হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যে মেয়েটি বাপের বাড়িতে ফিরে যায়। তার পরে এই দ্বিতীয় বিয়ে। মেয়েটির মাসি ছেলেটির পড়শি। সেই সুবাদেই ছেলেটির সঙ্গে ওই বালিকার আলাপ হয়।

সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মেয়েটি জানিয়েছে, মা কাজে বেরিয়ে গেলে অনেক সময়েই তাকে একা থাকতে হয়। তখন কিছু ছেলে তাকে নানা প্রলোভন দেখায়, যা তার ভাল লাগে না। নিরাপত্তার অভাব বোধ হয়। সেই কারণেই সে বিয়ে করেছে। আধিকারিকদেরও মনে হয়েছে, পরিস্থিতির কারণে বাড়িতে মেয়েটির অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হোমে সে সুরক্ষিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Police Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE