বিদ্যুৎ গিয়েছিল বৃহস্পতিবার রাত তিনটে নাগাদ। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এল সেই বিদ্যুৎ। টানা ১৯ ঘণ্টা ধরে এই প্রবল গরমে বিদ্যুৎহীন রইল হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। তার মধ্যে ছিল নাজিরগঞ্জ, আন্দুলের মতো ঘনজনতবসতিপূর্ণ এলাকা।
কী কারণে এমন বিদ্যুৎ বিপর্যয়?
সিইএসসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘৩৩ হাজার ভোল্টের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ পরিবাহী ব্যবস্থার দু’টি তার একসঙ্গে খারাপ হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি। তবে এই কেব্ল ফল্ট কেন হল, সেটা এখনই বলা যাবে না। ’’
এই প্রবল গরমে এমন টানা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। আন্দুলের মধ্যে ঝোড়হাটের এক প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম ভোরে বিদ্যুৎ এসে যাবে। কিন্তু ১০টা নাগাদও যখন এল না, তখন বুঝলাম বড় গোলমাল। অথচ সিইএসসি-র হেল্পলাইনে ফোন করেও কোনও সদুত্তর পাইনি।’’
গরমে ছ’ মাসের ছেলেকে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন নাজিরগঞ্জের এক তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘সারা রাত ছেলেটা ঘুমোতে পারেনি। ঘেমে নাজেহাল হয়েছে। বিকেলের দিকে গরমে জ্বর এসে গিয়েছিল।’’ শয্যাশায়ী ও অসুস্থরা ব্যক্তিরাও এ দিন চরম দুর্ভোগে পড়েছিলেন।
বেলা যত গড়িয়েছে তত বেড়েছে জলসঙ্কট। বিদ্যুৎ না থাকায় সাঁকরাইল ব্লকের বানুপুর ১ এবং ২, সাঁকরাইল, দক্ষিণ সাঁকরাইল, প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকায় জলের পাম্প চালানো যায়নি। ফলে টাইমকলে জল আসেনি। বাড়িতে যাঁদের পাম্প রয়েছে, তাঁরা তা চালাতে পারেননি। অনেকেই বলছেন, এ দিনের ঘটনা তাঁদের মনে পড়াচ্ছে ২০২০ সালের আমপানের ঝড়ের সময়ের বিদ্যুৎ বিপর্যয়কে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেদার বিকিয়েছে বোতলবন্দি জল। অনেককে আবার জেনারেটর ভাড়া নিয়ে পাম্প চালাতে হয়েছে। কোথাও তার জন্যে দর হাঁকা হয়েছে ২০০ টাকা কোথাও আবার ৫০০। রাজগঞ্জ রেললাইনধার পাড়ার বাসিন্দা দীপা রায় বলেন, ‘‘ঘরে একটুও জল ছিল না। নলকূপে তো লম্বা লাইন। আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কোনওমতে দু’বালতি জল পেয়েছি।’’
অনেক সংস্থারই কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ পান। এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে সমস্যায় পড়েন তাঁরাও।
বিদ্যুৎ না থাকায় জেলার আন্দুল রোডের কয়েকটি পেট্রল পাম্প বন্ধ ছিল। সাঁকরাইলের যে সব এলাকায় ছোট কারখানা রয়েছে, সেগুলিও এ দিন বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ ছিল। কাজে যোগ দিতে এসে ফিরে যেতে হয় শ্রমিকদের। একটি কারখানার মালিকের কথায়, ‘‘সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুৎ যায় না বললেই চলে। ফলে আমাদের জেনারেটর বা ইনভার্টার নেই। আর সে কারণে এমন দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)