E-Paper

পুজো আসছে, ফের বাজি তৈরি বাড়ছে বেগমপুরে

প্রশাসন সূত্রের দাবি, বাজি প্রস্তুতকারীদের সংগঠনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে জমি খোঁজা হচ্ছে। বিডিও শৌভিক ভট্টাচার্য জানান, আজ, সোমবার জমি পরিদর্শন করা হবে।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাজ্যের কোথাও বাজি বিস্ফোরণ হলে আর পাঁচ জায়গার মতো এখানেও নড়ে বসে প্রশাসন। ‘নিয়মরক্ষার’ হানা চলে কালীপুজোর সময়। তার পরে নড়াচড়া বন্ধ! অভিযোগ, হুগলিতে বেআইনি বাজির বিরুদ্ধে প্রশাসনের মনোভাব এমনই। কয়েক মাস আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যুতে হইচইয়ের জেরে রাজ্য প্রশাসন বলেছিল, কোথাও বেআইনি বাজি কারখানা চলতে দেওয়া হবে না। তা হয়নি। হুগলিতে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি চলছেই।

এই জেলার বেগমপুর বাজি তৈরি চলছে দীঘদিন ধরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এগরা-বিস্ফোরণের পরে কিছুটা থিতিয়ে ছিল কাজ। এখন পুজো সামনে আসায় কাজের গতি বেড়েছে। শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, তাঁরা মহাজনের মাধ্যমে বারুদ এনে ঘরে বাজি বানান মজুরির বিনিময়ে। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘এখানে বাজির বড় কারবারি অল্প কয়েক জন। তাঁরা বড়লোক। শ্রমিক অল্প টাকা পান। তবে, ঘরে বসে সহজেই করা যায় এবং মহিলারাও করতে পারেন বলে এই পেশা ছাড়তে পারি না।’’ পুলিশের দাবি, দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের পরে বেগমপুরে অভিযান চালানো হয়। তবে, বেআইনি বাজি তৈরি দেখা যায়নি। জেলার অন্যত্রও বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি কার্যত বন্ধ।

রাজ্য সরকার ঘোষিত বাজি-ক্লাস্টার কত দূর!

প্রশাসন সূত্রের দাবি, বাজি প্রস্তুতকারীদের সংগঠনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে জমি খোঁজা হচ্ছে। বিডিও শৌভিক ভট্টাচার্য জানান, আজ, সোমবার জমি পরিদর্শন করা হবে।

তবে, শ্রমিকদের একাংশ জানিয়েছেন, ক্লাস্টার নিয়ে তাঁদের ধারণা নেই। শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সব কিছু বিবেচনা করেই ক্লাস্টার হবে। বেআইনি কারখানা চলতে দেওয়া হবে না।’’ এত দিনেও কেন তা বন্ধ করা গেল না, প্রশ্ন থাকছেই।

খানাকুলের নতিবপুরও বাজি তৈরির জন্য ‘খ্যাত’। জানা গেল, ইদানীং শব্দবাজি তৈরির বহর কমেছে। বেড়েছে আতশবাজির কাজ। যদিও পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, প্রশাসনিক নজরদারির কারণে এখানে বাজি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ।কয়েক বছর আগে এখানকার বাজির কারিগররা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, নিয়ম শিথিল করে বাজি তৈরির বিধিবদ্ধ অনুমতি দেওয়া হোক। সে অনুমতি মেলেনি।

এ দিকে, লাগাতার বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানির জেরে চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিবেশ অ্যাকাডেমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শীঘ্রই বিষয়টি তাঁরা পরিবেশ আদালতে তুলবেন। বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধে বেশ কয়েক বছর ধরে তারা প্রশাসনের নানা স্তরে আবেদন জানিয়ে আসছে। সংগঠনের সভাপতি, পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, দত্তপুকুর নিয়ে চলতি বছরে বেআইনি পাঁচ-পাঁচটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচুর বোমাবাজি এবং বোমা উদ্ধারের ঘটনাতেও বেআইনি বাজি কারখানার প্রসঙ্গ ওঠে।

বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘দেশে আইন রয়েছে। আদালতও বিভিন্ন সময়ে রায় দিয়েছে। পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু, রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের অনীহায় বেআইনি বাজি কারখানা বহাল তবিয়তে চলছে। বিস্ফোরণে প্রাণ যাচ্ছে।’’

বিষয়টি নিয়ে খোলা চিঠি দিয়ে বেআইনি বাজি কারখানা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য আহ্বান করা হচ্ছে ওই সংগঠনের তরফে। বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, তাঁদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ২৮টি। মারা গিয়েছেন ৮০ জনের বেশি। এই পরিসংখ্যান দিয়ে এ দিন রাজ্য সরকার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে চিঠি দিয়ে আরও এক বার বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধের আবেদন জানিয়েছে পরিবেশ অ্যাকাডেমি।

তথ্য সহায়তা: দীপঙ্কর দেও পীযূষ নন্দী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

chanditala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy