Advertisement
E-Paper

বহু অভিযোগ সত্ত্বেও পদপ্রাপ্তি, প্রবীরকে নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলেই

এই অসন্তোষের কথা ফিরছে তৃণমূলের আরও অনেক নেতা-কর্মীর মুখে। তবে, এ নিয়ে মন্তব্য করেননি দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:১৬
Prabir Chatterjee of TMC red marked

তৃণমূলের পতাকা হাতে প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

থানায় ভুরি ভুরি অভিযোগ। হাজতবাস করেছেন। তবে, দলের নেকনজর তাঁর উপর থেকে সরেনি! তৃণমূলের খানাকুল-১ ব্লক সহ-সভাপতি প্রবীর চট্টোপাধ্যায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় অবশ্য অস্বস্তি ঢাকতে পারছেন না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের অন্দরে শোরগোল পড়েছে। শাসক দলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।

প্রবীরের বাড়ি খানাকুলের ময়ালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লকের এক তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্য তোলপাড়। হাটবাজারে আমাদের দেখলেই লোকে চোর বলে হাঁক দিচ্ছে। অথচ, সব জেনেও গত অক্টোবরে প্রবীরকে ব্লকের সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হল। ২০২০ সালে কিশোরপুর-১ অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছিল। আমরা আপত্তি জানালেও শোনা হয়নি।’’

এই অসন্তোষের কথা ফিরছে তৃণমূলের আরও অনেক নেতা-কর্মীর মুখে। তবে, এ নিয়ে মন্তব্য করেননি দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা তারকেশ্বরের বিধায়ক রামেন্দু সিংহরায়।

তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতে জেতেন প্রবীর। দু’বছর পর থেকে অর্থলগ্নি সংস্থার কাজে অধিকাংশ সময় বাইরে থাকতেন। ২০১০ সাল নাগাদ ফিরে কয়েক জনের সঙ্গে ‘ভারত কৃষি সমৃদ্ধি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড’ অর্থলগ্নি সংস্থা খোলেন। সারদা-কাণ্ডের পরে ’১৩ সালে এটির ঝাঁপ বন্ধ হয়। এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অনেকে প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আমানতকারীরা বাড়িতে চড়াও হয়ে টাকা দাবি করতে থাকেন। তখন থেকেই বাড়ি ছেড়ে প্রবীর আরামবাগের বসন্তপুরের ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার এখান থেকেই সিবিআই তাঁকে ধরে।

এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে যায় ২০১৮ সালে। ইতিমধ্যেই আদালতে চার্জশিট জমা পড়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, প্রবীরদের সংস্থাটি আমানতকারীদের থেকে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা তুলেছে। সরকারি আইনজীবী অমিতাভ গুহ বলেন, ‘‘ওই চিট ফান্ড মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রবীর।’’ প্রবীরের গ্রেফতারি নিয়ে তাঁর কাকা দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে অন্য একটি প্রতারণা মামলায় ৩ মাস জেল খেটেছেন প্রবীর। সে সময় আরামবাগ থানায় বেশ কিছু জাল শংসাপত্র নিয়ে অভিযোগের তদন্তে নেমে থেকে পুলিশ প্রবীরের ভাড়াবাড়ি থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়, বিডিও এবং চিকিৎসকের ভুয়ো স্ট্যাম্প উদ্ধার করে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ওই মামলা করেছিল।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই জেলার যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করেছে ইডি। আর এক যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে তারা একাধিক বার জেরা করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এই ঘটনায় অস্বস্তিতেই ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ বার প্রবীর-কাণ্ডে সেই অস্বস্তি আরও বাড়ল। তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রামেন্দুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সিবিআই তাদের কাজ করেছে। কেউ অপরাধী হলে, বিচার হবে।’’

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের পুলিশ-প্রশাসন চোর-ডাকাতদের আগলে রাখলে কী হবে! সিবিআই-ইডির থেকে নিস্তার নেই।’’ জেলার সিপিএম নেতা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সমস্ত চিটফান্ডে তৃণমূলের নেতারা যুক্ত। ২০১৩ সাল থেকে সিবিআই ঠিকমতো তদন্ত করলে প্রতারিতরা এত দিনে টাকা পেয়ে যেতেন।’’

TMC Khanakul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy