দুর্গাপুজোর অষ্টমীর রাতে হাওড়ার বনবিহারী বসু রোডে ঠাসা ভিড়ে বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুরেশ যাদবকে (৫৬) গুলি করে খুনের ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, শালিমারের পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ওই দুই ব্যক্তি ‘টিপার’ হিসাবে কাজ করেছিল। তবে, তারাই সুরেশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল কিনা, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানতে পারেনি পুলিশ। তদন্তে নেমে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়াও সিসি ক্যামেরার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। আটক দুই ব্যক্তির মোবাইলও পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে প্রতিমা দর্শন করতে বেরোনো ভিড়ের মধ্যে আচমকা পর পর গুলির শব্দে চমকে উঠেছিলেন দর্শনার্থীরা। একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে তাঁরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রয়েছেন এক প্রৌঢ়। চোখের সামনে এই ‘শুট আউট’-এর ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। খবর পেয়ে আসে হাওড়া থানার পুলিশ। বাহিনী নিয়ে পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারাও। ওই প্রৌঢ়কে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যক্তির নাম সুরেশ যাদব। বাড়ি বিহারের গোপালগঞ্জে। পুলিশ জানায়, সুরেশ এক জন কুখ্যাত দুষ্কৃতী ও বালি মাফিয়া। এর আগে বিভিন্ন অপরাধে সে সাত থেকে আট বছর জেল খেটেছে। বছর দুয়েক আগে বিহারেরই একটি দুষ্কৃতী-দল সুরেশের বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করেছিল। কিন্তু, সে যাত্রায় সুরেশ বেঁচে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়ার বনবিহারী বসু রোডে সুরেশের একটি ফ্ল্যাট আছে। তার এক আত্মীয় থাকেন ওই এলাকাতেই। প্রতি বছর পুজোয় হাওড়ার ওই ফ্ল্যাটে সস্ত্রীক এসে থাকত সুরেশ। এ বারও তেমনই এসেছিল। সুরেশের স্ত্রী রমাবতী বিহারের গোপালগঞ্জের একটি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান।
জানা গিয়েছে, অষ্টমীর রাতে সাড়ে ৯টা নাগাদ দোকানে চা খেয়ে সুরেশ হেঁটে ফ্ল্যাটে ফেরার সময়ে দুই দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চেপে এসে তার বুক লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি চালায়। এর পরে তারা শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বিহারেরই কোনও দুষ্কৃতী-দল সুরেশকে খুন করার জন্য হাওড়ায় এসেছিল। এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে, তারা এই খুনের মূল ‘টিপার’ হতে পারে, আবার শার্প শুটারও হতে পারে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)