E-Paper

ধোঁয়া-ধুলোর দূষণে ফুসফুসের সমস্যা বাড়ছে উত্তর হাওড়ায়

উত্তর হাওড়ার অধিকাংশ এলাকাই ঘিঞ্জি ও ঘন বসতিপূর্ণ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে হাওড়া পুরসভায় নির্বাচিত কোনও বোর্ড না থাকায় এবং হাওড়া ও বালি পুরসভার সংযুক্তি নিয়ে গোলমাল চলায় উত্তর হাওড়ায় উন্নয়নের কাজ সে ভাবে হয়নি।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৩
An image of Pollution

দূষিত: ধুলো ও কারখানার দূষণে জর্জরিত হাওড়ার ঘুসুড়ি এলাকা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

যথেচ্ছ ভাবে বৃক্ষচ্ছেদন, বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট এবং শয়ে শয়ে বাড়ি ও বহুতলের নির্মাণকাজের জেরে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়েছে উত্তর হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পিতল, কাঁসা, লোহা-সহ নানা ধরনের কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া বায়ুসূচক সংক্রান্ত তথ্য বলছে, বর্তমানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে সালকিয়া, বাঁধাঘাট, মালিপাঁচঘরা ও ঘুসুড়ি এলাকায়। যে কারণে ফুসফুসের ব্যাধি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বহু বাড়িতে বয়স্কদের জন্য ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে হচ্ছে। শিশুদের মধ্যেও অনেকে হাঁপানি এবং সর্দি-কাশিতে ভুগছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধুলো চাপা দেওয়ার জন্য হাওড়া পুরসভা কয়েক দিন স্প্রিঙ্কলার দিয়ে সকালে জল ছেটালেও এখন তা অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে।

উত্তর হাওড়ার অধিকাংশ এলাকাই ঘিঞ্জি ও ঘন বসতিপূর্ণ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে হাওড়া পুরসভায় নির্বাচিত কোনও বোর্ড না থাকায় এবং হাওড়া ও বালি পুরসভার সংযুক্তি নিয়ে গোলমাল চলায় উত্তর হাওড়ায় উন্নয়নের কাজ সে ভাবে হয়নি। আর এই সুযোগে অজস্র বেআইনি বহুতল মাথা তুলেছে সেখানকার অলিগলিতে। অবাধে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আবাসন তৈরি করতে গিয়ে অসংখ্য গাছ কেটে ফেলায় গোটা এলাকা থেকে সবুজ প্রায় উধাও। ফলে, সেখানে দূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্য বলছে, উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ি ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ যেখানে থাকা উচিত প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে, তা হয়ে গিয়েছে ২১৯, দ্বিগুণেরও বেশি। আবার বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ ৬০ মাইক্রোগ্রামের জায়গায় রয়েছে ১০৭ মাইক্রোগ্রাম, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। এলাকার বাসিন্দা সুস্মিতা শর্মা বললেন, ‘‘ঘুসুড়ি-সহ জিটি রোডের আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ১১টির বেশি স্কুল রয়েছে। ধুলোর মধ্যে দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের বাচ্চারা হাঁপানি ও সর্দি-কাশির মতো রোগে ভুগছে। আমাদেরও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’’

স্থানীয় গিরিশ ঘোষ রোডের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অর্চনা সাউ ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত। তাঁর ছেলে বিনীত সাউ বললেন, ‘‘এই দূষণের জন্যই আমার মাকে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে হয়। আমাকে তাই বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে হয়। আজকাল এমন সিলিন্ডার অনেকের বাড়িতেই রাখতে হচ্ছে।’’ একই বক্তব্য জিটি রোডের পাশে ডবসন রোডের বাসিন্দা রবীন সিংহের। তিনি বলেন, ‘‘আমার ১০ বছরের মেয়েটার হাঁপানি হয়ে গিয়েছে। এখানকার অনেক শিশুই শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগে ভুগছে। ভাবছি, এখান থেকে বাড়ি বিক্রি করে চলে যাব।’’

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘উত্তর হাওড়ার টিএল জায়সওয়াল হাসপাতালের ছাদে গেলেই দেখা যাবে, আশপাশের কারখানাগুলির চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া গোটা এলাকা ঢেকে দিচ্ছে। এর উপরে রয়েছে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানবাহনের শ্লথ গতি। সব মিলিয়ে উত্তর হাওড়ার অবস্থা সত্যিই শোচনীয়।’’

উত্তর হাওড়ার ধুলো-ধোঁয়া নিয়ে চিন্তিত হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্প্রিঙ্কলার গাড়িগুলি জল দেয় মূলত বড় রাস্তায়। এ বার থেকে উত্তর হাওড়ার অলিগলিতেও জল দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের ছোট স্প্রিঙ্কলার গাড়ি দেবে বলেছে।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, শুধু রাস্তা ধুয়ে কি আর বায়ুদূষণ রোখা যাবে? এ প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Air pollution Howrah Respiratory problems lungs

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy