Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
TMC

‘বহিষ্কৃত’ নেতা ফের স্বমহিমায় তৃণমূলে

এ সব দেখেই দলের একাংশ ‘শাস্তি’র বহরে ক্ষুব্ধ। সপ্তগ্রামের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘অকারণে বহিষ্কার নাটক। দলেরই মুখ পুড়ল।’’ কিছু নেতা আবার বলছেন, ‘‘ভোট বড় বালাই।’’

মুখ্যমন্ত্রীর সভার আয়োজনে দায়িত্ব পালনে দেখা গেল তৃণমূল নেতাকে।

মুখ্যমন্ত্রীর সভার আয়োজনে দায়িত্ব পালনে দেখা গেল তৃণমূল নেতাকে।

প্রকাশ পাল
বাঁশবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৮
Share: Save:

প্র‘শাস্তি’র মেয়াদ মাত্র সাড়ে তিন মাস!

দলবিরোধী কাজের অভিযোগে গত ৭ নভেম্বর ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছিল বাঁশবেড়িয়ার তৃণমূল নেতা সত্যরঞ্জন ওরফে সোনা শীলকে। সেই সোনাকেই এখন দলের কাজে দেখা যাচ্ছে ‘স্বমহিমায়’। বুধবার ডানলপের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় আয়োজনে তিনি ছিলেন ‘গুরুদায়িত্বে’। মঞ্চশয্যা থেকে দলনেত্রীর ফ্লেক্স লাগানো— সবেতেই ছিল তাঁর উপস্থিতি।

এ সব দেখেই দলের একাংশ ‘শাস্তি’র বহরে ক্ষুব্ধ। সপ্তগ্রামের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘অকারণে বহিষ্কার নাটক। দলেরই মুখ পুড়ল।’’ কিছু নেতা আবার বলছেন, ‘‘ভোট বড় বালাই।’’ তাঁদের মতে, এমনিতেই হুগলি লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। সর্বত্রই ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের মুখে সোনার মতো নেতাকে বাইরে রাখার ‘সাহস’ নেতৃত্ব দেখাতে পারলেন না।

সোনার ‘প্রত্যাবর্তনের’ বিষয়ে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। তিনি শুধু বলেন, ‘‘বিজেপিকে উৎখাত করাই এখন তৃণমূলের প্রধান কাজ। সে জন্য এবং উন্নয়নের প্রশ্নে দলকে এককাট্টা করাই লক্ষ্য। তাই সবাই মিলে লড়াইতে নেমেছি।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, দলে সত্যরঞ্জনের কোনও পদ নেই। তবে, বাঁশবেড়িয়ায় শাসক দলের রাজনাতিতে তিনি প্রভাবশালী। দলের অনেক নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রীরই তিনি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁর স্ত্রী অরিজিতা বাঁশবেড়িয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান। গত ৭ নভেম্বর জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব সাংবাদিক সম্মেলন করে দলবিরোধী কাজের জন্য সোনাকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। দিলীপ জানিয়েছিলেন, অভিযোগ সম্পর্কে সতর্ক করার পরেও কাজ না-হওয়াতেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ওই সিদ্ধান্ত। সোনার সঙ্গে দলের কেউ যেন ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক’ না রাখেন, সেই নির্দেশও সবাইকে দেওয়া হয়েছিল বলে দিলীপ জানিয়েছিলেন।

শাসক দলের এই অবস্থান বদলাতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। ডানলপে মমতার সভার আয়োজনে গত কয়েক দিন মাঠে কার্যত পড়ে থেকেছেন সোনা। জেলার তাবড় তৃণমূল নেতারা কার্যত প্রতি পদক্ষেপে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সভার জন্য নেতানেত্রীদের ছবি দেওয়া একের পরে এক ফ্লেক্সে দেখা গিয়েছে বড় বড় অক্ষরে লেখা— ‘সৌজন্যে— সোনা শীল, সমাজসেবী’।

‘প্রত্যাবর্তনে’ খুশি সোনার দাবি, তাঁকে লিখিত ভাবে বহিষ্কার করা হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে বহিষ্কারের কথা শুনেই তিনি দলের জেলা সভাপতির কাছে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। প্রয়োজনে তদন্ত করা হোক। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা সভাপতিই জানিয়েছিলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তখনই আমাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।’’

বিরোধীরা অবশ্য তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না। জেলার বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা দিলীপ নাথের শ্লেষ, ‘‘তৃণমূল আর দুর্নীতি সমার্থক। তাই ওই দলে এ সব স্বাভাবিক। মানুষ সব দেখছেন।’’ বিজেপি নেতা স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলে আবার দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কার! সবটাই নাটক। শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকতে পারছে না ওরা।’’

বহিষ্কার-পর্ব ঘিরে জল্পনা তৃণমূলে এটাই প্রথম নয়। কয়েক মাস আগে আমপান-ক্ষতিপূরণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে চণ্ডীতলার গরলগাছা পঞ্চায়েতের প্রধান মনোজ সিংহকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। ওই পর্যন্ত। তাঁকেও দলের কর্মসূচিতে দেখা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE