বর্ষা এলে কী শিক্ষক, কী ছাত্রছাত্রী— কোনও পক্ষই ছাতা আনতে ভোলেন না। শুধুমাত্র যাতায়াতের সুবিধার জন্য নয়, বৃষ্টি পড়লে শিক্ষকেরা নিজেদের মাথায় ছাতা ধরে ক্লাস করান! ছাত্রছাত্রীরাও ছাতা ধরেই শোনে, লেখে!
পান্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ ছবি প্রতি বর্ষার। চলতি মরসুমেও ছবিটা পাল্টাবে না বলে ধরেই নিয়েছেন শিক্ষকেরা। কারণ, শ্রেণিকক্ষ বলতে মাটির দেওয়ালের উপরে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত টিনের চাল। জানলার পাল্লা নেই। ফলে, রোদ-বৃষ্টির অবাধ আনাগোনা। গরমে তেতে ওঠে টিনের চাল। বর্ষায় ছাদ দিয়ে জল পড়ে বইপত্র, চেয়ার-টেবিল ভেজে।
১৯৭২ সালে তৈরি হওয়া স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৮। প্রধান শিক্ষককে নিয়ে তিন জন শিক্ষক, এক জন শিক্ষিকা রয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। স্কুলভবনের সামনের দিক দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেন না, ভিতরে ওই অবস্থা। পাঁচিলে ঘেরা স্কুল। সামনে পাকা রং করা ঘর। চারটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে দু’টিই বেহাল। মঙ্গলবার সকালেই সামান্য বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় পড়ুয়ারা ক্লাস করেছে। শিক্ষকও ছাতা ধরেই পড়িয়েছেন। বুধবারে স্কুল চলাকালীন বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা হয়নি।
প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত গুপ্তের খেদ, ‘‘স্কুলের বেহাল দশার কথা শিক্ষা দফতর থেকে ব্লক অফিসে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’’ সুদীপ সাহা নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘‘২০১০ সাল থেকে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। মাটির দেওয়ালের উপরে সিমেন্টের প্লাস্টার। মাথায় টিনের চাল। এত খারাপ অবস্থার মধ্যেও যে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসছে, এটাই অনেক। ছাতা নিয়ে ক্লাসে করানো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। বর্ষাকালে সবাই ছাতা নিয়ে আসে।’’
বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস জানিয়েছেন, স্কুলটি সংস্কারের জন্য প্রায় ১১ লক্ষ টাকা লাগবে। কয়েক মাস আগে ব্লক থেকে অনুমোদনের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন দফতরে সেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। বর্ষার মরসুমে কী করা যায়, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান শিল্পা নন্দী বলেন, ‘‘অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের প্রয়োজন আছে। ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি কী, জানি না। খোঁজ নেব।’’
স্কুলটির রান্নাঘরের অবস্থাও শোচনীয়। গিয়ে দেখা গেল, টিকটিকি-আরশোলার আনাগোনা রয়েছে। মিডডে মিল কর্মী পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বৃষ্টিতে ভিজে রান্না করি। কারণ, ছাদ ফুটো। চাল-ডাল-আলু রাখা খুব সমস্যার সব ভিজে যায়। টিকটিকি, ইঁদুর, আরশোলার উৎপাত তো রয়েছেই। রান্না করার পর খাবারের পাশে বসে থাকতে হয়। যতক্ষণ না বাচ্চারা খাচ্ছে!’’
তৃতীয় শ্রেণির এক অভিভাবক মনে করেন, স্কুলের এই অবস্থার দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মা বারবার জিজ্ঞেস করে, ব্যাগে ছাতা আছে তো? স্কুলে অনেক বার বইখাতা ভিজে গিয়েছে বৃষ্টিতে। বাড়ি ফিরে শুকিয়েছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)