E-Paper

কারখানার অ্যাসিড সরাসরি মিশছে গঙ্গার জলে, দেখেও দেখে না কেউ

দূষণমুক্তি দূর, গঙ্গাকে নোংরা করার যেন প্রতিযোগিতা চলছে হাওড়ায়। মুক্তি কী ভাবে, নেই উত্তর।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯
An image of Ganga

বিষধর: নাইট্রিক অ্যাসিড মিশ্রিত জল সরাসরি মিশছে গঙ্গায়। হাওড়ায় বিচালি ঘাটের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখলে মনে হবে, গঙ্গার ধারে বুঝি আগুন লেগেছে। আসলে আগুন নয়, গঙ্গার পাড় ঘেঁষে তৈরি হওয়া যন্ত্রচালিত ধোবিখানা থেকে বেরোনো অ্যাসিড গঙ্গার জলের সঙ্গে মিশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী হয়ে আকাশে উড়ে যাচ্ছে। অ্যাসিডের মতো বিষ সরাসরি গিয়ে মিশছে গঙ্গার জলে। এই ছবি হাওড়ার দিকে, টোপিওয়ালা ঘাটের। ওই ঘাটের পাশেই গঙ্গার তীর ঘেঁষে তৈরি হয়েছে বড় বড় যন্ত্র দিয়ে কাপড় কাচার আধুনিক ধোবিখানা। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এসি কামরার যাত্রীদের ব্যবহৃত চাদর, বালিশের কভার-সহ নানা ধরনের কাপড় দিনরাত কাচা হচ্ছে সেখানে। আর সেই সমস্ত যন্ত্র থেকে বেরোনো অ্যাসিড জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত বর্জ্য জল যখন কারখানার নালা দিয়ে সরাসরি গঙ্গায় পড়ছে, তখন রীতিমতো ধোঁয়া বেরোতে দেখা যাচ্ছে সেই জল থেকে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই এই দূষণ চলছে। ধোবিখানার ভিতরে কী চলছে, তা যাতে বোঝা না যায়, তার জন্য লোহার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রাখা হয় প্রায় সব সময়ে।

প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এই কারখানাটি এ ভাবে গঙ্গার জলকে নোংরা করার পাশাপাশি মারাত্মক ভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটালেও প্রশাসনের কোনও নজরদারি কেন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা মারাত্মক অপরাধ। যাঁরা এ ভাবে গঙ্গাকে দূষিত করছে, তাঁদের যেমন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, তেমনই প্রশাসনের যাঁরা এই বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদেরও প্রত্যেককে আইনানুগ শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।’’ ওই ধোবিখানা নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একমাত্র সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে কাপড় কাচার একটি কারখানা আছে। ওই ঘাটের কাছে কী কারখানা হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

শিবপুর ঘাটের কিছুটা আগেই রয়েছে বিচালি ঘাট। গঙ্গার ওই ঘাটের আশপাশেই গড়ে উঠেছে অনেকগুলি ছোট ছোট কারখানা। ওই জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, গোটা ঘাট ভরে রয়েছে নর্দমা থেকে তোলা পাঁক-বোঝাই বস্তা আর আবর্জনায়। সোনার দোকানের সামনের নর্দমা থেকে তোলা পাঁক-মাটি বস্তায় ভরে নিয়ে আসা হয়েছে ছোট মালবাহী গাড়িতে চাপিয়ে। ঘাটের পাশেই অস্থায়ী ছাউনির নীচে চলছে নাইট্রিক অ্যাসিডের সাহায্যে পাঁক থেকে সোনা-রুপোর গুঁড়ো আলাদা করার কাজ। যেখানে এই কাজ চলছে, তার সামনে থেকেই একটি নালা নেমে গিয়েছে গঙ্গায়। অ্যাসিড মেশানো জল সরাসরি গিয়ে পড়ছে গঙ্গায়। এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘কে বলল, গঙ্গার ক্ষতি হয় না? এই সব বিষাক্ত জল গঙ্গায় পড়ায় ওই নদী আরও দূষিত হচ্ছে। আমি বিষয়টি দেখে পরিবেশ আদালতকে জানাব।’’
হাওড়ার দিকে এ ভাবে গঙ্গার দূষণ হচ্ছে শুনে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সভাপতি কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘ অভিযোগ পেলে আমরা জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জানাই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ganges Pollution Howrah ganga Water pollution

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy