E-Paper

রেল সেতুর নীচে শ্রমিকের খণ্ডিত দেহ, উদ্ধার ঘিরে টানাপড়েন

অভিযোগ, ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ এলাকাটি গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দিলেও দেহাংশগুলি উদ্ধারের ব্যবস্থা করেনি। এমনকি, রেল পুলিশ ঘটনার খবর পেলেও দেহ কারা উদ্ধার করবে, তা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলিতে ছিন্নভিন্ন দেহটি রাস্তাতেই পড়ে থাকে রাত আড়াইটে পর্যন্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১০:০৮
দেহ কারা উদ্ধার করবে, তা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলে হাওড়া রেল পুলিশ ও শালিমার রেল পুলিশের মধ্যে।

দেহ কারা উদ্ধার করবে, তা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলে হাওড়া রেল পুলিশ ও শালিমার রেল পুলিশের মধ্যে। —প্রতীকী চিত্র।

রাস্তায় পড়ে রয়েছে এক ব্যক্তির ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মুণ্ড। ধড় পড়ে রয়েছে কয়েক ফুট দূরে। চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে হাত ও পায়ের অংশ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হাওড়ার ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসের কাছে চ্যাটার্জিপাড়া রেল সেতুর নীচে এ ভাবেই ওই ব্যক্তির দেহাংশ পড়ে থাকতে দেখে শিউরে উঠেছিলেন পথচলতি মানুষ। তাঁরা দ্রুত খবর দেন স্থানীয় ব্যাঁটরা ট্র্যাফিক গার্ডে। কিন্তু অভিযোগ, ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ এলাকাটি গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দিলেও দেহাংশগুলি উদ্ধারের ব্যবস্থা করেনি। এমনকি, রেল পুলিশ ঘটনার খবর পেলেও দেহ কারা উদ্ধার করবে, তা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলিতে ছিন্নভিন্ন দেহটি রাস্তাতেই পড়ে থাকে রাত আড়াইটে পর্যন্ত। শেষে শালিমার রেল পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির পকেট থেকে একটি আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। তা থেকে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম আলি হোসেন (৩৯)। বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। পুলিশের অনুমান, রেললাইন ধরে হেঁটে আসার সময়ে রাতের কোনও ট্রেন বা মালগাড়িতে কাটা পড়ার পরে আলির দেহাংশ ছড়িয়ে পড়ে নীচের রাস্তায়। প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশ জানতে পেরেছে, আলি আগে ভিন্‌ রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাসকয়েক আগে বাড়ি ফিরে আসেন। এর পরে কিছু দিন ধরে তিনি হাওড়ার আমতায় কাজ করছিলেন।

সম্প্রতি পরিবারের কাছ থেকে রাজ্য সরকারের ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের কথা জানতে পারেন আলি। সেই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আলি রেললাইন ধরে হেঁটে হাওড়া স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, দাশনগর ও টিকিয়াপাড়া স্টেশনের মাঝে চ্যাটার্জিপাড়া রেল সেতুতে উঠতেই ওই ব্যক্তির সামনে কোনও ট্রেন বা মালগাড়ি চলে আসে। ঝাঁপ দেওয়ার আগেই ট্রেনে কাটা পড়েন আলি। তাঁর মাথা ও অন্য দেহাংশ টুকরো টুকরো হয়ে নীচের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই দুর্ঘটনার পরে দীর্ঘক্ষণ রাস্তাতেই পড়ে ছিল দেহাংশগুলি। আলির দেহ কারা উদ্ধার করবে, তা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলে হাওড়া রেল পুলিশ ও শালিমার রেল পুলিশের মধ্যে। শেষে রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ শালিমার রেল পুলিশ এসে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। তবে, কোন ট্রেনে আলি কাটা পড়েছেন, তা শুক্রবার রাত পর্যন্ত জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। রেল পুলিশের বক্তব্য, রেললাইনে কাটা পড়ার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ট্রেনের গার্ডকে পরবর্তী স্টেশনে গিয়ে ঘটনার বিবরণ বা মেমো দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে টিকিয়াপাড়া কিংবা দাশনগর, কোনও স্টেশনেই মেমো জমা পড়েনি।

দেহ উদ্ধার করতে দেরি হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শালিমার রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা রাত আড়াইটে নাগাদ খবর পাই। তার পরেই গাড়ি পাঠিয়ে দেহ তোলার ব্যবস্থা করি। ইতিমধ্যেই মৃতের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। ময়না তদন্তের পরে পরিবারের হাতে ওই ব্যক্তির দেহ তুলে দেওয়া হবে। কোন ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Railway dead body

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy