হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড় সংলগ্ন তিনটি ওয়ার্ডের জমা জল এখনই নামছে না। ওই জল বার করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ‘মাইক্রো টানেলিং’ করে পাইপ বসানোর পরিকল্পনা করেছে হাওড়া পুরসভা। তবে, সেই কাজ শুরু হবে দু’দিন পরে এবং তা করবে কেএমডিএ। বুধবার দুপুরে কেএমডিএ-র পদস্থ কর্তা ও ইঞ্জিনিয়ারেরা ভাগাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়া নিকাশি নালার অবস্থা সরেজমিনে দেখার পরে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ দিন হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসাবে মাইক্রো টানেলিং করে তিনটি ওয়ার্ডের জল বেরোনোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাটির নীচ দিয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে এই পাইপ নিয়ে যাওয়া হলে এলাকায় ধস নামার কোনও আশঙ্কা থাকবে না বলে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন। এই পাইপ বসানো হলে ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জমা জলের সমস্যা মিটবে।’’
উল্লেখ্য, বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের জেরে নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে উত্তর হাওড়ার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। বাসিন্দাদের দুর্বিষহ অবস্থা আরও বেড়েছে নর্দমার জলের সঙ্গে পুরসভার পানীয় জল মিশে যাওয়ায়। শুধু তা-ই নয়, নর্দমা উপচানো নোংরা জলে ভেসেছে লিলুয়ার বি রোড, সি রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার গলিপথ। সেই জল ঢুকে এসেছে বাড়ির ভিতরেও!
দু’সপ্তাহ এই পরিস্থিতি চলার পরে মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা প্রায় দেড় ঘণ্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে এসে উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী ধস নামার ১২ দিন পরেও নিকাশি নালার কাজ শুরু না হওয়ার জন্য আঙুল তোলেন কেএমডিএ-র দিকে। এর পরেই বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন কেএমডিএ-এর অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারেরা। পুরসভার চেয়ারপার্সন ও উত্তর হাওড়ার বিধায়কের উপস্থিতিতে তাঁরা নিকাশি ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন।
বিকেলে পুর চেয়ারপার্সন জানান, আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, বামনগাছির সি রোড থেকে মাইক্রো টানেলিং করে ১৫০০ মিলিমিটার ব্যাসের একটি পাইপলাইন পাতা হবে ভাগাড়ের পাশে জলাধার (যে জলাধার পুরসভার খাতায় অক্সিডেশন পন্ড নামে পরিচিত) পর্যন্ত। নিকাশি নালার জল ওই জলাধারের মাধ্যমে পচাখাল হয়ে গঙ্গায় গিয়ে পড়বে। তাই ভাগাড়ের ওই জলাধারটির জল ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খনন-কাজও শুরু হচ্ছে।
পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘আবর্জনার পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি জায়গায় স্টিল পাইলিং হবে। বাকি অংশে মাটির নীচ দিয়ে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে পাইপ বসানোর কাজ চলবে। এই কাজ শেষ হলে তিনটি ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমরা মনে করি।’’
এ দিকে, বেলগাছিয়ায় অবৈজ্ঞানিক ভাবে ভাগাড় তৈরি করে এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে, এই অভিযোগে এ দিন পুরসভার চেয়ারপার্সনকে স্মারকলিপি দেয় পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘পরিবেশ রক্ষা আইন, ১৯৮৬ অনুযায়ী হাওড়া পুরসভার দায়িত্ব ছিল আবর্জনা উৎসে বিভাজন এবং প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এত দিনেও তারা কাজের কাজ কিছু করেনি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৬ অনুযায়ী উৎসে আবর্জনা ভাগ করার কাজ যাতে নাগরিকেরাই করেন, সেই প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)