নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া
হুগলির ১২টি পুরসভার ভোটে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন কাল, শনিবার। ‘নির্দল’ হয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া ক’জন ‘বিক্ষুব্ধ’ দলীয় নেতা-কর্মী শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করবেন, তা নিয়েই এখন জল্পনা তুঙ্গে জেলা তৃণমূল শিবিরে। কারণ, টিকিট না-পাওয়ায় বিভিন্ন পুরসভায় এমন বেশ কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মী ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, যাঁদের নিজেদের এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ফলে, তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না-করলে তৃণমূল প্রার্থীদের লড়াইটা কঠিন হবে বলেই মনে করছেন নেতাদের কেউ কেউ।
বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের কেউ দাবি করছেন, নাম প্রত্যাহারের জন্য দলের নেতাদের তরফ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে। এ নিয়ে জেলা নেতৃত্বের কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, আরামবাগে ‘নির্দল’ হিসেবে দাঁড়ানো এক তৃণমূল কর্মী বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র তুলে নিয়েছেন। আব্দুল রহিম নামে ওই তৃণমূলকর্মী বলেন, “দলের নির্দেশেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করলাম।” আরামবাগে ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টিতে ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল কর্মীরা ‘নির্দল’ হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট জিতেন্দ্রনাথ এ দিন বৈরাগী বলেন, “স্ক্রুটিনির পরে নির্দলের একটি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে।’’
তবে, ‘বিক্ষুব্ধ’দের একটা বড় অংশের দাবি, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না। উত্তরপাড়া-কোতরঙের তৃণমূল কর্মী প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ওরফে নিতাইয়ের কথাই ধরা যাক। দলের প্রার্থী-তালিকা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি ‘নির্দল’ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১৩টি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী দিয়েছি। আমাদের দলে ঠিকাদারের স্ত্রী থেকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হামলায় অভিযুক্তদেরও টিকিট দেওয়া হয়েছে। আমি ছাড়াও কালাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সৎ এবং সারা বছর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা কর্মীরা বাদ পড়েছি। নির্দল হয়ে দাঁড়ানোই এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ।’’ কালাচাঁদ অবশ্য ভোটে দাঁড়াননি।
তৃণমূলের বিতর্কিত প্রথম তালিকায় চাঁপদানির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মহম্মদ জাকির হোসেনের নাম ছিল। সংশোধিত তালিকায় তিনি বাদ পড়েন। তিনি পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। ক্ষুব্ধ জাকির ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনিও বলেন, ‘‘নাম বাদ পড়ায় অপমানিত হয়েছি। দল নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভোটে লড়ব।’’
চাঁপদানিরই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর জিতেন্দর সিংহ। তিনিও প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁর স্ত্রী ডেইজি সিংহকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। জিতেন্দরও টিকিটের দাবিদার ছিলেন। টিকিট না পেয়ে তিনি ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ‘নির্দল’ হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। জিতেন্দরের বক্তব্য, ‘‘১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পরিষেবা এবং দলের সংগঠন আমি করেছি। কিন্তু, আমাকে প্রার্থী করা হল না। দল উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে নির্দল হয়েই লড়ব।’’ সুরেশ পালটা বলেন, ‘‘জাকির কোনও দিন তৃণমূল করেননি। জিতেন্দর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও কাজ করেননি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল হেরেছে। কী ভাবে অন্য ওয়ার্ডে টিকিটের আশা করেন! আমার বা অন্য কারও পরিবারের একাধিক প্রার্থীর বিষয় দল ঠিক করেছে।’’ ‘নির্দল’-এর তালিকায় রয়েছে আরও বেশ কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই কোথায় কোথায় কঠিন হয়, সেটাই এখন দেখার।