আচমকা পদত্যাগ করলেন উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের তুলসীবেড়িয়ার অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি মদনমোহন মণ্ডল। মঙ্গলবার তিনি উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের দলীয় বিধায়ক নির্মল মাজির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তুলসীবেড়িয়া ওই বিধানসভা কেন্দ্রেই পড়ে। কী কারণে পদত্যাগ তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মদনবাবু। তবে, তুলসীবেড়িয়া অঞ্চল তৃণমূলের প্যাডে লেখা এবং তাঁর সই করা একটি বয়ান সোশাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়েছে। যাতে পদত্যাগের পিছনে নির্মলবাবুর প্রতি বেকার যুবকদের চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঠিক কী রয়েছে ওই বয়ানে?
নির্মলবাবুর নাম করে লেখা হয়েছে— ‘আপনি ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে যুবকদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা না দেওয়ার কারণে যুবকেরা আমাকে অত্যধিক ভাবে চাপ দিচ্ছেন। তাই আমি অঞ্চল সভাপতি থেকে পদত্যাগ করলাম’।
এই বয়ান নিয়েও মদনবাবু মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এমনকি, লেখাটি তিনিই সোশাল মিডিয়ায় দিয়েছেন কিনা, তাও জানাতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংবাদমাধ্যমকে কোনও কথা বলব না। চিঠি যে কোনও বিষয়ে দলীয় নেতৃত্বকে দিতে পারি। তা বলে সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলতে বাধ্য নই।’’
ভোটের মুখে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা মানেননি নির্মলবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘আমি ওই প্রতিশ্রুতি কখনও দিইনি।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘মদনবাবু যদি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন বা তার বিনিময়ে কোনও রফা করে থাকেন, তা হলে তার দায় তাঁকেই নিতে হবে। উনি এখন হয়তো অন্য খেলা খেলতে চাইছেন। এই সব কথা বলে দলবিরোধী কাজকর্ম করছেন। আমরা বিষয়টি দলের শৃঙ্খলা কমিটিকে জানাব। ভোটের আগে দলের অনেকেই ভেবেছিল, বিজেপি সরকার করবে। অনেকেই দলে থেকে পিছন থেকে ছুরি মারার চেষ্টা করেছিল।’’
মদনবাবু বর্তমানে জেলা পরিষদেরও সদস্য। দলের নতুন নিয়ম অনুযায়ী এক ব্যক্তি দু’টি পদে থাকতে পারবেন না। সে দিকেও ইঙ্গিত করে বিধায়ক বলেন, ‘‘দলের জেলা কমিটির পরিবর্তন হয়েছে। জেলা সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে। এ বার সব কমিটিরই পরিবর্তন হবে। তাই মদনবাবুর পদত্যাগের গুরুত্ব নেই।’’
দুই নেতার এই চাপান-উতোর নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মদনবাবু তাঁর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বিধায়ককে। অভিযোগ বিধায়কের বিরুদ্ধেই। তাই এ বিষয়ে বিধায়কই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
তবে, বিষয়টি লুফে নিয়েছে বিজেপি। তাদেরও দাবি, বিধানসভা ভোটের আগে মানুষকে ভুরি ভুরি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ওই কেন্দ্রের বিজেপি নেতা চিরণ বেরা বলেন, ‘‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কথা ওদের দলের নেতার পদত্যাগপত্রেই লেখা রয়েছে। তৃণমূল নেতারা এখন সাধারণ মানুষের চাপের মুখে পড়ছেন। তাই মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন।’’