E-Paper

অনুদান ফেরত ঠেকাতে হাওড়ায় কি প্রচ্ছন্ন হুমকি?

আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার কিছু ক্লাব এ বারের পুজোয় সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হাওড়ার কিছু ক্লাবও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৫২

—প্রতীকী চিত্র।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সূত্রে ‘থ্রেট কালচার’ বা হুমকি-সংস্কৃতির যে কদর্য চেহারা সম্প্রতি বেআব্রু হয়ে গিয়েছে, হাওড়ায় দুর্গাপুজো নিয়ে সমন্বয় বৈঠকেও কি সেটাই দেখা গেল? শনিবার ওই বৈঠকে উপস্থিত পুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকেরই মনে হয়েছে, তৃণমূলের নেতারা যে সুরে অনুদানের টাকা নিতে ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন, তা কার্যত প্রচ্ছন্ন হুমকিরই নামান্তর। অর্থাৎ, টাকা নিতে হবে। নইলে যে কী হবে, তা ভেবেই তাঁরা শঙ্কিত।

আর জি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার কিছু ক্লাব এ বারের পুজোয় সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হাওড়ার কিছু ক্লাবও। অভিযোগ, সেই সমস্ত ক্লাবকে এ বার চাপ দিয়ে টাকা নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন শাসকদলের নেতাদের একাংশ। প্রতি বছরের মতো এ দিন দুর্গাপুজো নিয়ে হাওড়ার শরৎ সদনে সমন্বয় বৈঠকের আয়োজন করেছিল হাওড়া সিটি পুলিশ। পুজো যাতে নির্বিঘ্নে কাটে, তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। সেই সঙ্গে পুজোর গাইড ম্যাপেরও উদ্বোধন করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের চার বিধায়ক— কল্যাণ ঘোষ, গৌতম চৌধুরী, রানা চট্টোপাধ্যায় ও প্রিয়া পাল। ছিলেন জেলাশাসক পি দীপপ প্রিয়া ও নগরপাল প্রবীণ ত্রিপাঠীও।

সেখানেই পুজোর উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সাংসদ প্রসূন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদানের টাকা যে সমস্ত ক্লাব নিচ্ছে না, তারা রাজনীতি করছে। মাতব্বরি করে অনেকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এটা না করে অনুদানের টাকা নিয়ে নিন।’’ এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এখানে রাজনীতি চলবে না, অসভ্যতা চলবে না। অনেকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এটা লজ্জার। আসলে এ সব ন্যাকামি হচ্ছে। বাংলায় মমতার চেয়ে বড় কেউ নেই।’’ এর পরে কার্যত একই সুরে ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো বাংলার অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। যাঁরা পুজোয় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করবেন, উদ্যোক্তারাই তাঁদের প্রতিহত করবেন।’’

এ দিনের বৈঠকে ১৭টি পুজোকে ৮৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়, গত বছর পুজো হয়েছিল ১৩৭৭টি। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০১২টি আবেদন জমা পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুজোকর্তা বলেন, ‘‘আমরা টাকা নেব না জানানোয় নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে সিদ্ধান্ত বদলের জন্য। এ বার বেশ ভয়ই করছে।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব হুমকির অভিযোগ মানতে না চাইলেও সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আর জি করের ঘটনার পরে খোদ প্রশাসনই তো তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে। অনেক ক্লাব তাই প্রতিবাদ স্বরূপ টাকা ফেরত দিচ্ছে ওই ঘটনার বিচার চেয়ে। এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিবর্তন করব বলে এসে এই সরকার বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আর জি করের ঘটনায় আমরা মানুষ হিসাবে সকলে লজ্জিত, ব্যথিত। তাই ক্লাবগুলি অনুদানের টাকা নিচ্ছে না। এতে রাজনীতির কী আছে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2024 TMC Threats RG Kar Protest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy