কামান আর নেই। চুরি হয়ে গিয়েছে, নাকি নষ্ট হয়েছে— কেউ জানেন না। এখন পুজোর সূচনা ও সন্ধিপুজোয় কামান দাগার বদলে দু’বার ‘গাছ বোমা’ ফাটানো হয় খানাকুলের সেনহাটের মিত্র পরিবারের প্রাচীন দুর্গাপুজোয়।
একসময়ের জমিদার পরিবারের ওই পুজোর প্রকৃত বয়স কারও জানা নেই। ওই বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের দেবব্রত মিত্র বলেন, “সেন বংশের রাজত্বকালে এই পুজোর সূচনা বলে আমরা জেনে আসছি। সেই হিসাব ধরলে পুজোর বয়স প্রায় ৮০০ বছরের কাছাকাছি।’’
প্রাচীনত্বের নমুনা বলতে কোনও একসময়ে বর্ধমানের রাজার দেওয়া একটি ছিদ্রযুক্ত তামার বাটি পুজোয় ব্যবহৃত হয়। যা ‘জলঘড়ি’ নামে পরিচিত। ওই পরিবারের সদস্যেরা জানান, ওই জলঘড়ির সময় ধরেই সন্ধি পুজোর সময় নির্ধারণ হয়। জল ভর্তি হয়ে তামার পাত্রটি ডুবতে ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ড সময় নেয়। সেটি কতবার জলে ডুবলে সন্ধিপুজোর কাজ শুরু হবে, তা গাণিতিক নিয়মে বের করেন জলঘড়ির দায়িত্বে থাকা আচার্য। সেই সময় ধরেই সন্ধিপুজোর আগে বর্তমানে ‘গাছ বোমা’ ফাটানোর শব্দ ধরেই এখনও আশপাশের ১০-১২টি গ্রামে সন্ধিপুজো শুরু হয় বলে দাবি মিত্র পরিবারের। তাদের সন্ধিপুজোয় মোষ বলি উঠে গিয়েছে। এখন ছাগল বলি হয়।
এ ছাড়া টিকে থাকা বৈশিষ্ট্য বলতে অধিকাংশ পুজোয় যেখানে দশমীর দিন সিঁদুর খেলা হয়, সেখানে মিত্রবাড়ির পুজোয় পরিবারের বিবাহিত মহিলারা অষ্টমীর দিনে সিঁদুর খেলেন। ষষ্ঠীতে কুলদেবতা রঘুনাথ জিউকে রথে চড়িয়ে দুর্গামন্দিরে আনা হয়। দশমীতে ওই বিগ্রহকে মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রথ টানেন পরিবারের সদস্যেরাই। এই অকাল রথের উৎসবকে কেন্দ্র করে দশমীতে বিশেষ ভিড়ও হয়।
দুর্গাপুজোর দালান প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুটের। মিত্র পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় ৪০০। দেশে-বিদেশে থাকা ওই সব সদস্যদের অধিকাংশই পুজোর দিনগুলিতে গ্রামে ফেরেন। পুজোয় কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে প্রায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। খান পাঁচেক পুকুরে মাছ চাষও হয়। সেই আয় থেকেই পুজোর সব খরচ চলে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)