E-Paper

গ্রামবাসীর উদ্যোগে নবজীবন বাগনানের স্কুলের

পরিস্থিতিতেই দলমত নির্বিশেষে কিছু গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। চাঁদা তুলে তাঁরা পাঁচ জন শিক্ষক রাখেন।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৯:০২
বাগনানের ছয়ানি গুজরাট উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

বাগনানের ছয়ানি গুজরাট উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

সরকার নতুন করে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করেনি। হতাশ হয়ে ওঁরা বসে থাকেননি। আলাদা করে শিক্ষক নিয়োগ করে, চাঁদা তুলে তাঁদের পারিশ্রমিক দিয়ে বাগনানের ছয়ানি গুজরাট উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের এই উদ্যোগে কয়েক বছরের মধ্যে চার থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৬২-তে। স্কুল বাঁচানোর উদ্যোগে হাত মিলিয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএমও।

তিন জন স্থায়ী শিক্ষক দিয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলটি চালু হয় ২০০৯ সালে। এলাকার চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনও হাই স্কুল না থাকায় স্কুলছুট রুখতে এখানে ওই স্কুলটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। স্কুলটি চালু হওয়ায় পড়ুয়া ভর্তির হিড়িক পড়ে। দু’এক বছরের মধ্যে পড়ুয়ার সংখ্যা হয়ে যায় প্রায় ২০০। কিন্তু ক্রমে তিন শিক্ষকই বদলি হয়ে যান। ২০১৮ সালে যখন শেষ শিক্ষক বদলি হন, তখন স্কুলে পড়ুয়া মাত্র চার জন। এর পরে শিক্ষা দফতর এক জন অতিথি-শিক্ষক পাঠালেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। অভিভাবকেরা ধীরে ধীরে স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন। পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্কুলে তালা পড়ার উপক্রম হয়।

এই পরিস্থিতিতেই দলমত নির্বিশেষে কিছু গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। চাঁদা তুলে তাঁরা পাঁচ জন শিক্ষক রাখেন। গ্রামের উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীরাই শিক্ষক হিসাবে ন্যূনতম পারিশ্রমিকে পড়াতে রাজি হন।

গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ফের বেড়েছে পড়ুয়ার সংখ্যা। ওই গ্রামবাসীদের মধ্যে অন্যতম বিকাশ মাইতি বলেন, ‘‘আমরা ঠিক করি, জনা পাঁচেক উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীকে বুঝিয়ে শিক্ষক হিসাবে এখানে আনব। নিজেরাই চাঁদা তুলে তাঁদের যৎসামান্য পারিশ্রমিক দেব।’’

শুধু শিক্ষক নিয়োগেই বিকাশরা ক্ষান্ত হননি। বিকাশ জানান, এলাকার বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে তাঁরা প্রধান শিক্ষকদের বলেন, যেন পঞ্চম শ্রেণিতে ওই বিদ্যালয়ে তাঁরা পড়ুয়া পাঠান। অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝান। এতে কাজ হয়।

এর মধ্যে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ওই গ্রামবাসীরা শিক্ষা দফতরে নিয়মিত দরবারও করতে থাকেন। যদিও অতিথি-শিক্ষক নিয়োগের বাইরে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আপাতত শিক্ষা দফতরের তরফে আলাদা ভাবে দু’জন অতিথি-শিক্ষক দেওয়া হয়েছে।

বিকাশ তৃণমূল কর্মী। এ ছাড়াও স্কুল বাঁচানোর উদ্যোগে শামিল হয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত বাগনান ২ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সমরেন্দু সামন্ত, উলুবেড়িয়া দক্ষিণের তৃণমূল সভাপতি দুলাল কর, সিপিএম সমর্থক অমিতাভ সরকার, প্রশান্ত সামন্তেরা। সমরেন্দু বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে নিশ্চয় স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হবে। কিন্তু তার আগেই যদি স্কুলটিতে তালা পড়ে তা হলে তো কোনও লাভ হবে না। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনও রাজনীতি নয়। স্কুল বাঁচানোর লড়াইয়ে আমরা এক ছাতার নীচেই আছি।’’ একই মন্তব্য অমিতাভ, প্রশান্তদেরও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bagnan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy