আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেই জাতীয় ও রাজ্য সড়কে টোটো চলছেই। হুগলির উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়াতে তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও টোটোর দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ মানুষজন। নিত্যদিন যানজট, দুর্ঘটনা লেগেই থাকছে। এই পরিস্থিতিতে যান-যন্ত্রণায় নাজেহাল পরিবহণ দফতর গোটা রাজ্যে টোটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে সচেষ্ট হল। মঙ্গলবার রাজ্য পরিবহণ দফতরের তরফে এই মর্মে জেলাশাসকদের নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরেও হুগলির নানা প্রান্তে টোটোর বাড়বাড়ন্ত কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কী বলা হয়েছে নির্দেশিকায়?
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতি, ট্র্যাফিক পুলিশ, টোটো-অটো সংগঠনকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিশেষত টোটো নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করতে হবে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় কত টোটো চলে, তার তালিকা তৈরির। টোটো-মালিককেই তা চালাতে হবে
(প্রতিবন্ধী টোটোমালিক বাদে)। অনেকেই একাধিক টোটো বাজারে ভাড়া খাটান। তা করা যাবে না। পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতিভিত্তিক টোটো বেঁধে দেওয়া গেলে ভাল।
চালক যে এলাকায় থাকেন, সেই পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার মধ্যে তাঁর গতিবিধি সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে (যেমন হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে) কী করা হবে, তা স্থানীয় ভাবে আলোচনাতেই ঠিক করতে হবে।
একধিক খেপে টোটো চালানোর সূচি করা যেতে পারে। ধরা যাক, কোনও পুর এলাকায় ১২০০ টোটো চলে। ভোর ৫টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি রাস্তায় নামবে। তার পরে সেগুলি বসে বাকি গাড়িগুলি রাস্তায় নামবে। প্রয়োজনে পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে টোটোয় নম্বর প্লেট লাগানো যেতে পারে। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী মনে করেন, একসঙ্গে সব টোটো রাস্তায় না নামলে যানজট অনেকাংশে কমবে। টোটোচালকদের লোকসানও হবে না। বর্ধমানে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রীর বক্তব্য, কয়েকটি বিষয়ে পরিবহণ দফতর কড়া হবে। তা হল, আদালতের নির্দেশে তিন চাকা গাড়ি জাতীয় বা রাজ্য সড়কে চলতে পারবে না। টোটো-অটো, উভয়কেই এই নির্দেশ মানতে হবে। স্বীকৃতিহীন, অর্থাৎ, বেআইনি কোনও টোটো উৎপাদনকারী সংস্থা চলতে দেওয়া হবে না।
তবে, জিটি রোডের মতো জনবহুল সড়কে টোটো না ওঠার নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশ। অবশ্য সেই চেষ্টা করা হবে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। সার্বিক ভাবে অর্ধেক বা সিকি শতাংশ সমস্যা কমলেও পথ চলাচল অনেকটাই মসৃণ হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
দফতরের কর্তারা মানছেন, টোটোর বাড়বাড়ন্তে জনজীবনে প্রভাবের অভিযোগ নানা জায়গা থেকে মিলছে। মন্ত্রী জানান, জেলা প্রশাসনকে দ্রুত এই আলোচনা করতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোন জেলায় আলোচনায় কী হয়, দেখা যাক। নিজেদের মতো গাইডলাইন তৈরি করুক তারা। আমরা তদারকি করব। অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তাদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্স করা হবে।’’
শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা বলেন, পরিবহণ দফতরের নির্দেশের বিষয়টি পুরসভার কাছে আসেনি। নির্দেশ পেলে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
নয়া নির্দেশিকায় বাসমালিকদের অনেকে উৎসাহিত। তাঁদের আশা, বাসরুটে টোটো চলাচল ৩০ শতাংশ কমানো গেলেও বাস পরিষেবার হাল ফিরবে। এর আগে বিভিন্ন সময় হুগলিতে টোটো নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস জেলা প্রশাসন বা পুরসভার তরফে দেওয়া হলেও আখেরে তার কিছুই করা হয়নি।
টোটোচালকদের একাংশ জানিয়েছেন, আলোচনায় কী বলা হয়, সেটা আগে দেখে নিতে চান তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হোক যাতে তাঁদের পেটে
লাথি না পড়ে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)