(বাঁ দিক থেকে) মৃতের মা নির্মলা রায় এবং মৃত যুবক সাধন রায়। —নিজস্ব চিত্র।
ক্রিকেটার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে পরিবারের অর্থকষ্ট ঘোচাবেন। মায়ের কষ্ট বুঝতেন বছর আঠারোর সাধন রায়। কিন্তু মঙ্গলবার এক মুহূর্তে সব স্বপ্ন, সমস্ত ইচ্ছা শেষ হয়ে গিয়েছে। ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে হাওড়া স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন সাধন। দাশনগর স্টেশনে ঢোকার আগে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে মাথা ঠুকে যায় রামরাজাতলা আইটিআই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সাধনের। বন্ধুরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তত ক্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। বুধবার ছেলের নিথর দেহ নিয়ে আছাড়ি-পিছাড়ি খেতে খেতে নির্মলা রায় বলেন, ‘‘ও বলত, একটু অপেক্ষা করো মা, তার পর আর কষ্ট করতে হবে না তোমায়... সে-ই চলে গেল গো...।’’
সাধনের বাড়ি ব্যান্ডেলের গোপীনাথপুরে। বাবা দীপু রায় অসুস্থ। কাজকর্ম করার মতো শারীরিক সামর্থ্য নেই। মা নির্মলা পরিচারিকার কাজ করেন। সাধন পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতেন। প্রতিবেশী এবং আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, প্রতিশ্রুতিবান ক্রিকেটার ছিলেন। পরিবারের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবেন বলে দিনরাত পরিশ্রম করতেন। সাধনের এক বন্ধু রণিত সাহা বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। অলরাউন্ডার ছিল সাধন। খুব ভাল খেলত। তবে ওর স্বপ্ন ছিল, তাড়াতাড়ি একটা চাকরি পেয়ে মাকে সাহায্য করবে।’’ বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।
ব্যান্ডেল থেকে সাধন হাওড়া যেতেন পড়াশোনার জন্য। মঙ্গলবার বিকেলে লোকাল ট্রেনে এতটা ভিড় ছিল যে বগির ভিতরে যেতে পারেননি সাধন। দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। দাশনগর ঢোকার সময় একটি বাঁকে বিদ্যুতের খুঁটি মাথায় লেগে ছিটকে বগির মধ্যে পড়েন সাধন। সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারান তিনি। বন্ধুরা তাঁকে প্রথমে টিকিয়াপাড়া রেল হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখান থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি ওই তরুণকে।
সদ্য পুত্রহারা নির্মলা বলেন, ‘‘ও বলেছিল কলেজে ভর্তি হবে। সুদে টাকা ধার করেছিলাম। ভর্তি করলাম। বই কেনার মতো টাকা ছিল না। বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়ত। সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকে নিজের খরচ নিজেই চালাত।’’ একটু থেমে তিনি আরও বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে না খেয়ে কলেজ গিয়েছে ছেলে। গত কালও (মঙ্গলবার) কিচ্ছু খেয়ে যায়নি। আমাকে বলেছিল, দু’বছর পর তোমাকে আমি বসিয়ে খাওয়াব। আর লোকের বাড়ি কাজ করতে হবে না। এখন কী হবে! সব তো শেষ হয়ে গেল।’’ হাহাকার করে ওঠেন প্রৌঢ়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy