Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
জেতা ওয়ার্ড ছাড়তে হচ্ছে চার পুরপ্রধানকে

সংরক্ষণের গেরোয় সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসক-শিবির

আসন্ন পুরভোটে এ বার নিজেদের জেতা আসনে দাঁড়াতে পারবেন না চারটি পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যানেরা। একই অবস্থা হবে অনেক ভাইস-চেয়ারম্যান এবং বেশ কয়েক বার জেতা কাউন্সিলরদেরও। কারণ, সংরক্ষণ। সংরক্ষণের জেরে কাকে কাকে ছাড়তে হবে ওয়ার্ড, কারাই বা এ যাত্রায় রেহাই পাবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল কয়েক মাস ধরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

আসন্ন পুরভোটে এ বার নিজেদের জেতা আসনে দাঁড়াতে পারবেন না চারটি পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যানেরা। একই অবস্থা হবে অনেক ভাইস-চেয়ারম্যান এবং বেশ কয়েক বার জেতা কাউন্সিলরদেরও। কারণ, সংরক্ষণ।

Advertisement

সংরক্ষণের জেরে কাকে কাকে ছাড়তে হবে ওয়ার্ড, কারাই বা এ যাত্রায় রেহাই পাবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল কয়েক মাস ধরেই। অবশেষে জল্পনার অবসান হল পুর নির্বাচনের সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে। গত ২ ফেব্রুয়ারি জেলাশাসকের দফতর থেকে খসড়া সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলির আপত্তি থাকলে ১৪ দিনের মধ্যে তা জানাতে হবে। সেই কারণে নেতারা প্রকাশ্যে সংরক্ষণ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে জল্পনা থেমে নেই।

জেলার ১৪টির পুরসভার সবক’টিরই ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। সংরক্ষণের গেরোয় মূলত শাসক দলের নেতারাই সিদুঁরে মেঘ দেখছেন। কেননা, বিজেপি-জুজু তাঁদের তাড়া করছে। কারণ, দলের যে সব কাউন্সিলর টিকিট পাবেন না তাঁদের অনেকেই যে বিজেপি-র চৌকাঠে পা রাখতে পারেন, তা ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন শাসক দলের অনেক নেতাই। শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা অন্য আসনে দাঁড়াতে পারেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। এই আবহে দলের মধ্যেই আকচা-আকচির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। বিরোধী শিবিরে অবশ্য উত্তেজনার আঁচ তেমন নেই।

খসড়া সংরক্ষণ তালিকা অনুসারে রিষড়া পুরসভায় চেয়ারম্যান শঙ্করপ্রসাদ সাউ থেকে শুরু করে তৃণমূলের তিন জন চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলের ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। আগে রিষড়ার চেয়ারম্যান শঙ্কর সাউ ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। গত পুরসভা নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে জেতেন। এ বার ৯ নম্বর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হয়েছে। ওই পুরসভার আর এক হেভিওয়েট নেতা জাহিদ খান বরাবর জিতে এসেছিলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। ওই ওয়ার্ড সংরক্ষিত হওয়ায় গত বার ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়ান। এ বার ৬ নম্বর ওয়ার্ডও সংরক্ষণ তালিকায় ঢুকে যাওয়ায় সেখানে তাঁর দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। তাঁর পুরনো ৪ নম্বর ওয়ার্ডটি অবশ্য সংরক্ষণ তালিকা থেকে বাইরে রয়েছে এ বার। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, ওই ওয়ার্ডে গত বছর জিতে উপ-পুরপ্রধান হন আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার। পরে তিনি সাংসদ হন। ফলে, ধারে-ভারে অপরূপা অনেকটাই এগিয়ে।

Advertisement

তার উপর রিষড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী-রাজনীতির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা জানেন এই সে দিনও জাহিদের সঙ্গে অপরূপার স্বামী সাকির আলির সম্পর্ক ছিল আদায়-কাঁচকলায়। ফলে, জাহিদ আদৌ পুরনো আসনে দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। রিষড়ার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল বিজয় মিশ্র, সুভাষ দে, হর্ষপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেতা আসনও এ বার সংরক্ষিত হয়েছে।

ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান তৃণমূলের দীপক চক্রবর্তীর জেতা ওয়ার্ডও সংরক্ষণের আওতায় পড়েছে। একই পরিস্থিতি আরামবাগের তৃণমূল পুরপ্রধান স্বপন নন্দীর ওয়াার্ডটিরও। সেখানে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস-চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের আসন সংরক্ষণ তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। তারকেশ্বরে শাসক দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা সেখানকার উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর অবস্থাও একই। চাঁপদানির পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র এবং প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান তথা বর্তমান কাউন্সিলর তারক সিংহও নিজেদের আসনে দাঁড়াতে পারবেন না। বৈদ্যবাটির কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান প্রবীর পালের জেতা আসনও সংরক্ষিত হয়েছে।

স্বভাবতই, ওই নেতারা কোথায় দাঁড়াবেন তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বিজেপি সূত্রের খবর, দাঁড়ানো নিয়ে সংশয় রয়েছে এমন কিছু তৃণমূল নেতা ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জেলার ১৪টি পুরসভার মধ্যে উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত ১০টিকে জুড়ে কর্পোরেশন তৈরির পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। তৃণমূলের অন্দরে আশঙ্কা ছিল, কর্পোরেশন হলে তাদের আসন সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে টিকিট না পেয়ে অন্য দলে চলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। কিন্তু আপাতত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলেও সংরক্ষণের খসড়া তালিকার কারণে একই ধরনের আশঙ্কায় ভুগছেন শাসক দলের জেলা নেতারা।

জেলার এক পুরপ্রধানের কথায়, “কেউ কেউ দাঁড়াতে না পারলে অন্য দলে চলে যেতে পারেন। দু’-এক জন যোগাযোগও করেছেন শুনছি।”

জেলা বিজেপি-র সহ সভাপতি স্বপন পালের দাবি, “ওদের দলের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। তবে, দলের দুর্দিনে যাঁরা সঙ্গে ছিলেন টিকিটের ব্যাপারে তাঁদের বিষয়টি আগে মাথায় রাখতে হবে।”

তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। তাঁর বক্তব্য, “এখনই এত ভাবনাচিন্তা করার সময় আসেনি। সমস্যা থাকবে, সমাধানও হয়ে যাবে। সে জন্য জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব রয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার কী?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.