মিলের গেটে উদ্বিগ্ন শ্রমিকেরা। —ফাইল চিত্র
লকডাউনের সময়ে বন্ধ হয়েছিল শ্রীরামপুরের সুতোকল ‘মাদুরা কোটস প্রাইভেট লিমিটেড’। আর উৎপাদন চালু হয়নি। পুজোর মুখে বন্ধ ওই সুতোকল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি গত ৩১ অগস্ট শেষ হয়েছে। উৎপাদন না-হওয়ায় এখন চুক্তি নবীকরণের প্রয়োজন নেই।
মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লিখিত ভাবে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থাকে জানান। এর ফলে, তাঁদের মাথার উপরে থেকে সুতোকল কর্তৃপক্ষ হাত সরিয়ে নিলেন বলে ঠিকাশ্রমিকদের অভিযোগ। পুজোর মুখে কাজ হারিয়ে তাঁরা বিপাকে।
শ্রীরামপুরের ঋষি বঙ্কিম সরণির ওই সুতোকল সূত্রের খবর, এখানে স্থায়ী শ্রমিক জনা কুড়ি। প্রায় ১৮০ জন ঠিকাশ্রমিক ছিলেন। লকডাউনের সময় উৎপাদন বন্ধ হয়।
ঠিকাশ্রমিকরা জানান, উৎপাদন না-হলেও এপ্রিল মাসে পুরো বেতন (২৬ দিনের মজুরি) দেওয়া হয়। মে-জুনে ২২ দিন এবং জুলাইতে ১৫ দিনের মজুরি মেলে। গত ২২ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে জানান, অগস্টের মজুরি দেওয়া যাবে না। নতুন চুক্তিও করা হবে না। এতে উদ্বিগ্ন ঠিকাশ্রমিকরা পরের দিন মিলের সামনে অবস্থান করেন। মালিকপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিকদের ঘেরাওয়ের ফলে কর্তৃপক্ষের লোকজন বেরোতে পারেননি। সন্ধ্যার পরে পুলিশ এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মঙ্গলবার ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া চিঠিতে (কর্তৃপক্ষের তরফে কে দত্তের সই করা) বলা হয়, কোভিড পরিস্থিতির কারণেই উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকদের বোনাস এবং অন্য পাওনা থাকলে মিটিয়ে দিতে বলা হয়।
শ্রমিকদের অবস্থান-বিক্ষোভকে ‘বেআইনি’ এবং ‘হিংসাত্মক’ জানিয়ে বলা হয়, কোনও বিষয়ে বক্তব্য বা ক্ষোভ থাকলে তা যেন শ্রম দফতরে জানানো হয়। সাত শ্রমিকের নাম লিখে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানানো হয়। চিঠির প্রতিলিপি শ্রীরামপুর থানার আইসি এবং ডেপুটি শ্রম-কমিশনারের (ডিএলসি) কাছে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আরও বক্তব্য, শ্রমিকদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ এবং কিছু জনকে অন্যত্র কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। শ্রমিকরা সম্মত হননি। তার সময়সীমাও পেরিয়ে গিয়েছে।
সমস্যা সমাধানের দাবিতে সম্প্রতি শ্রম দফতরে গণ-দরখাস্ত দেন ঠিকাশ্রমিকরা। তাঁদের কাজে নেওয়া এবং অবিলম্বে উৎপাদন চালুর দাবি জানানো হয় তৃণমূলের তরফে। বাম-কংগ্রেস ওই দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থান করে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। ঠিকাশ্রমিকদের বক্তব্য, যে পরিমাণ আর্থিক প্যাকেজের কথা বলা হয়েছিল, তাতে সুরাহা হওয়ার নয়। অন্যত্র কাজে পাঠানোর শর্তও মানা সম্ভব ছিল না। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘খুব বিপদে পড়ে গেলাম। কোথায় কাজ পাব? কী ভাবে সংসার চালাব, ভেবে পাচ্ছি না।’’ অপর এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘বৌ-বাচ্চা নিয়ে আত্মহত্যার পরিস্থিতি তৈরি করা হল।’’
কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রশ্নের জবাব মেলেনি। মিলের মানবসম্পদ বিভাগের আধিকারিক সুমন মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া , ‘‘সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার এক্তিয়ার আমার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy