Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩
আরামবাগে ‘কুকুর হইতে সাবধান’

একদিনে কামড়ে জখম সাতাশ

লালগড়ের জঙ্গলের মতো বাঘের ভয় নয়, আরামবাগে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এক ‘পাগলা’ কুকুর। তার হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে শয্যা নিতে হয়েছে ২৭ জনকে!

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম স্থানীয় বাসিন্দারা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম স্থানীয় বাসিন্দারা।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০১:১০
Share: Save:

দিনদুপুরেও রাস্তায় বের হতেই ভয় পাচ্ছেন মানুষ। নিতান্ত দায়ে পড়ে বের হলে বার বার পিছনে তাকিয়ে দেখছেন, সে আসছে কিনা।

Advertisement

লালগড়ের জঙ্গলের মতো বাঘের ভয় নয়, আরামবাগে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এক ‘পাগলা’ কুকুর। তার হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে শয্যা নিতে হয়েছে ২৭ জনকে!

আরামবাগ শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দাপাচ্ছে খয়েরি রঙের কুকুরটি। সে দিনই তার কামড়ে জখম হন ২৫ জন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আরও দু’জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ জন মহিলা, দু’টি শিশু। মানুষকে সতর্ক করতে প্রচারে নেমেছে পুরসভা। আরামবাগ হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর বলেন, “পর্যাপ্ত প্রতিষেধক আছে। তা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেরই ক্ষত গুরুতর।’’

আক্রান্তদের অধিকাংশেরই পায়ে ক্ষত। কয়েক জনের হাত এবং থুতনির মাংসও খুবলে নিয়েছে কুকুরটি। তাঁদের মধ্যে নওপাড়ার অচিন্ত্য গুপ্ত বলেন, “কুকুর যে এমন হিংস্র হতে পারে, আগে দেখিনি। মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। আচমকা দৌড়ে এসে ঝাঁপ দিয়ে পায়ের মাংস খুবলে নিল।’’

Advertisement

রাস্তায় কুকুরের দাপট। নিজস্ব চিত্র

মহকুমাশাসক প্রীতি গোয়েলের নির্দেশে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের লোকজন হাজির হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কুকুরটি যে এক জায়গায় থাকছে না! দফতরের আধিকারিক সৌমেন দাসের খেদ, ‘‘পাগলা-কুকুর ধরা কী সহজ! আমাদের ছেলেদের প্রশিক্ষণই নেই। তবু চেষ্টা করছি।’’ তা হলে তাঁরা ঠিক কী করছেন? ‘‘আমরা মানুষকেই সচেতন করছি। কেউ আক্রান্ত হলে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছি’’—বলছেন সৌমেনবাবু।

হাত তুলে দিয়েছে বন দফতরও। বন দফতরের আরামবাগ শাখার রেঞ্জ অফিসার নির্মল মণ্ডল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কুকুর তো বন্যপ্রাণী নয়। বন দফতর কী করবে?

আরামবাগের সাধারণ মানুষ যাবেন কোথায়?

বহু রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক আন্দোলন দেখেছেন আরামবাগ শহরের মানুষ। এখনও মাঝেমধ্যে দেখেন। কিন্তু একটা পাগলা-কুকুর যে শহরে এমন আতঙ্ক ছড়াবে, কেউ ভাবেননি। কী ভাবে কুকুর ধরা যায়, তা নিয়েও আলোচনা তুঙ্গে।

এমনিতেই শহরের ১৯টি ওয়ার্ডেই পথ-কুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভ্যাটের জঞ্জাল তারা রাস্তায় এনে ফেলছে। পুরসভার বিরুদ্ধে অনেকে উদাসীনতার অভিযোগও তুলেছেন। এ বার পাগলা-কুকুরের দাপটে সেই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বিমল মণ্ডল তো বলেই দিলেন, ‘‘কুকুর নিয়ে পুরসভায় অভিযোগ জানালে হাসাহাসি করা হয়। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’’

পুরসভারও কি কিছুই করার নেই?

পুরকর্তারা জানান, তাঁদের কাছে পথ-কুকুরের সংখ্যার কোনও হিসাবই নেই। তাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ কিংবা পাগলা ও অসুস্থ কুকুরের চিকিৎসারও কোনও পরিকাঠামো নেই। এ সব নিয়ে কখনও ভাবনাচিন্তাও হয়নি। পুরপ্রধান স্বপন নন্দী অবশ্য বলেন, “শীঘ্রই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেব। প্রশাসন এবং বন দফতরের সঙ্গেও কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.