Advertisement
E-Paper

বিয়েটা আটকান, স্কুলে আর্জি ষোড়শীর

প্রণববাবু তখনই প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহের গোচরে আনেন বিষয়টি। তারপরেই স্কুলের উদ্যোগে এবং প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হরিপালের পূর্ব নারায়ণপুরের বাসিন্দা, ষোলো বছরের ওই ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ইতি টানলেন অভিভাবকেরা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
শিক্ষা: কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যরা। সঙ্গে প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষা: কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যরা। সঙ্গে প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

কাঁচুমাচু মুখে ক্লাস-টিচার প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে কথাটা বলেই ফেলেছিল হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রীটি, ‘বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে’।

প্রণববাবু তখনই প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহের গোচরে আনেন বিষয়টি। তারপরেই স্কুলের উদ্যোগে এবং প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হরিপালের পূর্ব নারায়ণপুরের বাসিন্দা, ষোলো বছরের ওই ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ইতি টানলেন অভিভাবকেরা।

সম্প্রতি হরিপাল‌ের ওই কিশোরীর বিয়ে ঠিক হয়। কয়েক দিন আগে সে স্কুলে বিষয়টি জানায়। প্রধান শিক্ষক সন্দীপবাবু এবং বিপ্লব সরকার ন‌ামে আর এক এক শিক্ষক মেয়েটির বাড়িতে যান। তাঁর অভিভাবকদের এত কম বয়সে মেয়ের বিয়ে না-দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ছাত্রীর বাড়ির লোক রাজি হননি। মেয়েটির বাবা কাঠমিস্ত্রি। তাঁরা জানান, অভাবের সংসারে ভাল পাত্র তাঁরা হাতছাড়া করতে চান না।

সন্দীপবাবু তখন বিডিও বিমলেন্দু নাথকে বিষয়টি জানান। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন। তার বাড়িতেও যান। কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে কী সমস্যা হতে পারে এবং তা যে আইনত নিষিদ্ধ, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের বোঝানো হয়। সোমবার ব্লক অফিসে গিয়ে মেয়েটির বাবা মুচলেকা দিয়ে জানান, সাবালিকা না-হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আর করবেন না।

ক্লাসরুমের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি জানিয়ে দেয়, আগামী বছর মাধ্যমিকে ভাল ফল করে উঁচু ক্লাসে পড়াশোনা করতে চায় সে। তার কথায়, ‘‘এখন বিয়ে হলে তো জীবনটাই নষ্ট। কারও যেন এমন না হয়।’’ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রশাসনের আধিকারিকেরা তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বিডিও বলেন, ‘‘মেয়েটি যে যথেষ্ট সাহস করে ঘটনার কথা জানিয়েছে, এটা সাধুবাদযোগ্য। ওর যাতে কোনও সমস্যা না হয়, আমরা সেটা দেখব। বাবা-মায়েদের বুঝতে হবে, এই বয়সে মেয়ের শারীরিক বা মানসিক বিকাশ পুরোপুরি হয় না।’’

মঙ্গল‌বার ব্লকের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে কন্যাশ্রী ক্লাব গঠনের ব্যাপারে বৈঠক করেন বিডিও। এ দিনই জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪ জন ছাত্রীকে নিয়ে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’ খোলা হয়। মেয়েটিও ক্লাবের সদস্য। ক্লাবের আহ্বায়ক, একাদশ শ্রেণির হৈমন্তী দে বলে, ‘‘ কম বয়সে কোনও মেয়ের বিয়ে বা নির্যাতনের খবর পেলে রুখে দাঁড়াব।’’

এর আগেও এই স্কুল কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় নাবালিকা বিয়ে বন্ধ হয়েছে। সন্দীপবাবু বলেন‌, ‘‘অভিভাবকদের মধ্যে চেতনা জাগানোর চেষ্টা আমাদের চলবে।’’

Girl Child Marriage নাবালিকা Teacher School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy