Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Accident

মুম্বই রোডে বাড়ছে দুর্ঘটনা, সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

মনোজ সিং নামে এক ট্রাক চালকের কথায়, ‘‘জাতীয় সড়কে কোথাও সিগন্যাল পোস্টগুলির দূরত্ব দশ কিলোমিটার, কোথাও ৫০০ মিটার। গাড়ি চালকেরাও অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না, কী গতিতে গাড়ি চালাতে হবে।’’

 দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
বাগনান শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৬:১৮
Share: Save:

সম্প্রতি গ্রামীণ হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুও হয়েছে কয়েক জনের। যার জেরে যানশাসন নিয়ে পুলিশের ভূমিকা ফের একবার প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সড়কের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ট্র্যাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা পরিচালনা সম্পর্কে অজ্ঞ সিভিক ভলান্টিয়ারদের সিগন্যাল ব্যবস্থা সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে, অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি পুলিশের।

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বলেন, ‘‘প্রতিটি ট্র্যাফিক সিগন্যাল পোস্টে এক জন করে অফিসার থাকেন। তারাই সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন। সিভিক ভলান্টিয়ার-রা তাঁদের সাহায্য করেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘খুব শীঘ্র আরও কিছু জায়গায় সিগন্যাল পোস্ট বসানো হবে। তাতে দু’টি পোস্টের দূরত্ব কমবে। তাড়াতাড়ি সার্ভিস রোড ও উড়ালপুলের কাজ শেষ করতে অনুরোধ করব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে। তাহলে জাতীয় সড়কে সিগন্যাল নিয়ে আর সমস্যা থাকবে না।’’

সম্প্রতি জাতীয় সড়কে ঘটে যাওয়া একাধিক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জানা গিয়ছে, অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক সময়ে সিগন্যাল দেওয়া হয় না। ফলে বিভ্রান্তিতে পড়েন গাড়ির চালকেরা। হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ৪২ কিলোমিটার অংশে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ। এ ছাড়া উলুবেড়িয়া শহর ও বাগনান বাসস্ট্যান্ডেও যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা। হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের অধীনে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ৭ টি সিগন্যাল পোস্ট (পানিয়াড়া, পাঁচলা, নিমদিঘি, নরেন্দ্র মোড়, বাগনান লাইব্রেরি মোড়, খাদিনান মোড় ও তামুলতলা ) রয়েছে। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছেন ১৫ জন অফিসার, ৩৫ কনস্টেবল এবং প্রায় ২০০ সিভিক ভলান্টিয়ার।

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি (ট্র্যাফিক) মহম্মদ আলি রাজা বলেন, ‘‘যে এজেন্সি সিগন্যাল পোস্ট বসিয়েছে, তারাই কী ভাবে সিগন্যাল দিতে হয়, তার প্রশিক্ষণ দিয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার ও অফিসারদের। সেই অনুযায়ী সিগন্যাল ব্যবস্থা পরিচালনা করেন তারা। সমস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে পুজোর পরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

পথচারী ও গাড়ি চালকদের একাংশের অভিযোগ, ঠিক সময়ে সিগন্যাল দেওয়া হয় না। যার ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে জাতীয় সড়কে। রমেশ সাউ নামে এক ডাম্পার চালকের দাবি, ‘‘গাড়ির গতি না বুঝেই সিগন্যাল ‘লাল’ করে দেওয়া হয় অনেক সময়। ফলে তাড়াহুড়ো করে গতি কমাতে হয়। পিছনের গাড়ি এসে ধাক্কা মারে। কখনও তাড়াহুড়োতে গতি কমাতে গিয়ে গাড়ি উল্টেও যায়।’’ দিন পাঁচেক আগে বাগনানের খাদিনান মোড়ে এ ভাবেই গতি কমাতে গিয়ে বালি বোঝাই একটি ডাম্পার উল্টে যায়। ওই সময় রাস্তা পেরনোর জন্য সিগন্যাল পোস্টের সামনে অপেক্ষা করছিলেন দুই মোটরবাইক আরোহী। কোনওরকমে রক্ষা পান তাঁরা। বুধবারও একই ঘটনা ঘটে বাগনান লাইব্রেরি মোড়ে। আচমকা সিগন্যাল ‘লাল’ হয়ে যাওয়ায় গতি কমাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান এক ডাম্পারের চালক। ডাম্পারটি সোজা ধাক্কা মারে শ্রীমন্ত নন্দী (৩৫) নামে হুগলির রাজবলহাটের এক মোটরবাইক আরোহীকে। স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সিগন্যাল পোস্টগুলি পরিচালনা করেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। অথচ তাঁদের ওই বিষয়ে কোনও প্রশিক্ষণ নেওয়া নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, ‘‘সিগন্যাল পোস্টে কাজ করতে গেলে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের তরফে আমাদের তা দেওয়া হয়নি। অথচ জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় আমাদের সিগন্যাল পোস্ট পরিচালনা করতে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘রাস্তার পাশে কিয়স্কে বসে থেকে অনেক সময় গাড়ির গতি ঠাহর করা যায় না। তাই গতি সম্পর্কে অনুমান করেই সিগন্যাল দিতে হয়। পোস্টে টাইমার-ও লাগানো নেই।’’

জাতীয় সড়কে সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন বলেই জানাচ্ছেন ওই কাজে নিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়াররা। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘একটি লেনে কোনও এক সময় গাড়ির গতি কম থাকলেও অন্য লেনে সেই সময় গাড়ির গতি বেশি হতে পারে। তখন সিগন্যাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ অসুবিধা হয়। বুঝে উঠতে পারি না কী করব! প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে শিখে নেওয়া যেত।’’

মনোজ সিং নামে এক ট্রাক চালকের কথায়, ‘‘জাতীয় সড়কে কোথাও সিগন্যাল পোস্টগুলির দূরত্ব দশ কিলোমিটার, কোথাও ৫০০ মিটার। গাড়ি চালকেরাও অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না, কী গতিতে গাড়ি চালাতে হবে। গতির একটু এদিক-ওদিক হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তরে সিগন্যাল পোস্ট থাকলে গাড়ি চালাতে সুবিধা হয়। দুর্ঘটনাও কমে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Mumbai Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE