Advertisement
E-Paper

পুরোপুরি ঠেকানো গেল না গঙ্গা দূষণ

গঙ্গাদূষণ রোধে নানা নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে বলে দাবি দুই জেলার গঙ্গা লাগোয়া পুরসভাগুলির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৫
বিসর্জনের পর উলুবেড়িয়া কালীবাড়ির ঘাটের অবস্থা এমনই। ছবি: সুূব্রত জানা ও সুশান্ত সরকার

বিসর্জনের পর উলুবেড়িয়া কালীবাড়ির ঘাটের অবস্থা এমনই। ছবি: সুূব্রত জানা ও সুশান্ত সরকার

ছবিটা মিশ্র। কোথাও পুজো উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় পুরসভা-পঞ্চায়েতের সচেতনতা চোখে পড়ল। কোথাও পড়ল না। ফলে, এ বারেও প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে দূষণের হাত থেকে পুরোপুরি রেহাই পেল না গঙ্গা। বুধবার বিকেল পর্যন্ত হুগলির একাধিক ঘাট এবং উলুবেড়িয়ার কালীবাড়ি ঘাটের কাছে ভাসতে দেখা গেল ফুলমালা, কাঠামো, পুজোর বর্জ্য এমনকি, আস্ত কলাগাছও!

গঙ্গাদূষণ রোধে নানা নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে বলে দাবি দুই জেলার গঙ্গা লাগোয়া পুরসভাগুলির। কিন্তু কেন এ বারও প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে গঙ্গাকে পুরোপুরি দূষণমুক্ত রাখা গেল না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

বিসর্জন-পর্ব শুরু হয়েছে মঙ্গলবার বিকেল থেকে। তার ২৪ ঘণ্টা পরেও বুধবার বিকেলে শেওড়াফুলির ছাতুগঞ্জ ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, প্রচুর কাঠামো জলে ভাসছে। রয়েছে ফুল-বেলপাতা থেকে প্রতিমার খড়, আস্ত কলাগাছ—সবই। কয়েক জন কাটারি দিয়ে প্রতিমার মাটি-খড় গঙ্গাতেই ছাড়িয়ে কাঠামো পাড়ে তোলার কাজ করছেন। ওই খড়, প্রতিমার কাপড় সবই জলে পড়ে থাকছে। বৈদ্যবাটীর মুখার্জি ঘাটের অবস্থাও তথৈবচ। এখানেও দেখা গেল, মালা না-খুলেই প্রতিমা ভাসান দেওয়া হল। কাঠামো তোলার লোক বা পুজো উদ্যোক্তাদের সচেতন করার জন্য পুরসভার কাউকে সেখানে দেখা গেল না। উত্তরপাড়া পুর-কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তুলে ফেলার পরিকাঠামো এখনও করা যায়নি। ফলে, বুধবারেও এখানে গঙ্গায় কাঠামো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। একই ছবি উলুবেড়িয়ার কালীবাড়ি ঘাটেও।

পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ব‌লেন, ‘‘খবর নিয়ে দেখেছি, দিল্লিতে যমুনায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়নি। এখানে গঙ্গায় সেটা করা গেল না। তবে কিছু জায়গায় দূষণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সার্বিক ভাবে এটা করতে পারলে আরও ভাল হতো।’’

বিসর্জন থেকে গঙ্গাদূষণ ঠেকিয়ে এ বার প্রশংসা কুড়িয়েছে গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েত। গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে ত্রিশটিরও বেশি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় বুধবার। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এ বারই প্রথম ক্রেন এনে সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তোলার ব্যবস্থা করেন। বুধবার সকালের মধ্যে পঞ্চায়েতের লোকেরা ঘাট পরিষ্কার করে দেন। এখানে প্রতিমার ফুলমালা ফেলার জন্যেও ঘাটের ধারে নির্দিষ্ট জায়গা করা হয়েছিল। উপ-পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘গঙ্গাকে নির্মল রাখতে আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বার থেকে আর বিসর্জনের সময় ঘাটের অপরিচ্ছন্ন চেহারা থাকবে না।’’

চন্দননগর এবং চুঁচুড়াতেও অবশ্য দ্রুত জল থেকে প্রতিমা তোলার কাজ হয়েছে। কোন্নগর পুরসভা গত বছরের মতোই গঙ্গার পাড়ে একটি জায়গায় হোস পাইপ দিয়ে প্রতিমার মাটি গলিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে।তার পরে সেই জল শোধন করে গঙ্গায় ফেলা হয়। বেশ কয়েকটি প্রতিমা এই ভাবে নিরঞ্জন করা হয়। উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আমাদের শহরে দোলতলা ঘাটে বহু প্রতিমা ভাসান হয়। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমরা সব পরিষ্কার করে দিচ্ছি।’’ শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল গৌরমোহন দে বলেন, ‘‘এ বার পুজোর উদ্যোক্তাদের থেকে বেশি সাড়া মিলেছে। সকলেই ফুল-বেলপাতা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলেছেন। বুধবারেও প্রচুর বিসর্জন হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমরা ঘাট একেবারে পরিষ্কার করে ফেলব।’’

উলুবেড়িয়া পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিসর্জনের জন্য পুরনো হাসপাতালের কাছে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বিসর্জনের সব ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে যে সব বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে সেগুলি ওই ঘাটে হয়নি। হয়েছে কালীবাড়িতে। সেই পুজোগুলির উদ্যোক্তারা পুরসভার নজরদারি এড়িয়ে গঙ্গাতে ফুলমালা ফেলেছেন।

Durga Puja 2019 Immersion Ganges
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy