খাতায় কলমে থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ কাজেরই অস্তিত্ব নেই।
১০০ দিনের প্রকল্পে বেনিয়ম ও দুর্নীতির এমনই ভুরি ভুরি নজির মিলেছে হাওড়ার বাগনান ১ ব্লকের বাকসিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতে। পরিণামে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরানো হয়েছে পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহকারি এবং নির্মাণ সহায়ককে।
পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের প্রকল্পে বনসৃজনের কাজে বিভিন্ন ভাগে ১৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে টাকা খরচ দেখানো হলেও কাজ প্রায় হয়নি। দুর্নীতির এই প্রমাণ মিলেছে ব্লক প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সরেজমিন পরিদর্শনে। এর পরেই কমিটির সদস্যরা বিডিও-র কাছে রিপোর্ট দেন। তার ভিত্তিতেই প্রাথমিকভাবে গত ১ জুন ওই দু’জনকে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরানো হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের উত্তর দিতে বলা হয়। ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ওই দু’জনের উত্তর পাওয়া গিয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উত্তর সন্তোষজনক না-হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ, সোমবার ওই দু’জন এবং পঞ্চায়েতের প্রধানকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
দুর্নীতি এবং বেনিয়মের যে নজির তদন্ত কমিটি ব্লক প্রশাসনের কাছে পেশ করেছে তার কয়েকটি হল দেউলগ্রাম খালপাড় থেকে রতাই পর্যন্ত বনসৃজনের জন্য যে খরচ দেখানো হয়েছে তাতে আছে ৩৫০টি বাঁশের দাম বাবদ ৪৯ হাজার টাকা। সারের দাম বাবদ ৪ হাজার টাকা। চারার দাম বাবদ ৩ হাজার ২০০ টাকা। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকার। সার ব্যবহারই করা হয়নি। চিহ্ন মেলেনি কোনও চারার।
ভোলসার থেকে শ্যামের দোকান পর্যন্ত বনসৃজনে খরচ দেখানো হয়েছে এইরকম--বাঁশের দাম ৪২ হাজার টাকা, সার ৪ হাজার টাকা, চারা ৩ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে, বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ টাকার। সার ব্যবহার করা হয়নি। চারার কোনও চিহ্ন মেলেনি। এই রকম মোট ৯টি ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প খতিয়ে দেখেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে খাতায় কলমে যে খরচ দেখানো হয়েছে বাস্তবের সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। কাজগুলি হয়েছে গত বছরের অগস্ট মাসে। বাঁশ, চারা এবং সারের দাম মেটানো না হলেও, জবকার্ডধারীদের টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাঁশ, চারা এবং সারের দাম মেটানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। তদন্তে গোলমাল ধরা পড়ায় তা আটকে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাই জেলাশাসকের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান। জেলা প্রশাসনের তরফে বাগনান ১ ব্লক প্রশাসনকে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযুক্তদের একজন নির্মাণ সহায়ক মৃণাল করাতি বলেন, ‘‘প্রকল্পগুলি আমি করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু পরবর্তী কালে আমাকে না জানিয়েই কাজগুলি হয়। কারা এর পিছনে ছিলেন বলতে পারব না। আমি কারণ দর্শানোর চিঠির উত্তর দিয়েছি।’’ নির্বাহী সহকারি গৌরী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কাজ হয়েছে বলে আমাকে ছবি পর্যন্ত দেখানো হয়। তারই ভিত্তিতে এই সব কাজের খরচ দেখানো হয়েছিল। উত্তরে আমি সে কথাই জানিয়েছি।’’
গ্রাম পঞ্চায়েতটি সিপিএম শাসিত। দুর্নীতি নিয়ে প্রধান গৌতম কুণ্ডু বলেন, ‘‘কম্পিটারে খরচ দেখানো হলেও বাঁশের বা চারার দাম মেটানো হয়নি। শুধুমাত্র জবকার্ডধারীদের টাকা দেওয়া হয়েছে। এটাকে দুর্নীতি বলা যাবে না।’’ মূলত যে দু’জন অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেই স্থানীয় নেতা বিশ্বনাথ মণ্ডল এবং মিঠুন ঘোষ বলেন, ‘‘কাজই যেখানে হয়নি সেখানে জবকার্ডধারীদের টাকা দেওয়া হল কিসের ভিত্তিতে।’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ব্লক প্রশাসনের তরফে তদন্ত রিপোর্ট এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy