Advertisement
E-Paper

প্রতারণায় অভিযুক্ত বায়োগ্যাস সংস্থা 

পাঁচলার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ২০১৫ সালে জয়পুরের খালনায় বায়োগ্যাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য সংস্থাটি তাঁর থেকে ১১ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু পরে তাঁকে জানানো হয়, বায়োগ্যাস নয়, নিতে হবে এলপিজি। ওই ব্যক্তি জানান, ২১১ জন গ্রাহককে বায়োগ্যাস সংযোগ দেওয়ার শর্তে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে চার হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন তিনি।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৬
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

বায়োগ্যাসের ডিলারশিপ নিতে গিয়ে সেই সংস্থার দ্বারা প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করলেন পাঁচলা, সাঁকরাইল, শ্যামপুরের কয়েকজন বাসিন্দা। অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের একটি সংস্থা বায়োগ্যাসের ডিলার নিয়োগ করার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়। ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তারা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বায়োগ্যাসের প্ল্যান্ট করে দেবে বলেও জানায় বিজ্ঞাপনে। অনেকেই সেই অনুযায়ী আবেদন জানান। আবার অনেকে প্ল্যান্ট বসানোর জন্য টাকাও জমা দেন। অভিযোগ, কেউই ডিলারশিপ পাননি। যাঁরা প্ল্যান্টের জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন প্ল্যান্ট পাননি তাঁরাও। শুধু তাই নয়, টাকাও ফেরত পাননি কেউই।

পাঁচলার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ২০১৫ সালে জয়পুরের খালনায় বায়োগ্যাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য সংস্থাটি তাঁর থেকে ১১ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু পরে তাঁকে জানানো হয়, বায়োগ্যাস নয়, নিতে হবে এলপিজি। ওই ব্যক্তি জানান, ২১১ জন গ্রাহককে বায়োগ্যাস সংযোগ দেওয়ার শর্তে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে চার হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি এলপিজি-র প্রস্তাবেই রাজি হন। তাঁর অভিযোগ, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে মাসে গড়ে ২০টি করে সিলিন্ডার তাঁকে পাঠানো হত। কয়েক মাস ধরে তা-ও বন্ধ। তিনি জানান, তাঁকে এখন গ্রাহকদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

সাঁকরাইলের এক যুবক ২০১৬-র গোড়ায় ওই সংস্থায় ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সংস্থাটির তরফে তাঁকে গুদাম করতে বলা হয়। প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে গুদামও করেন তিনি। কিন্তু তাঁকে বায়োগ্যাস বা এলপিজি সিলিন্ডার— দেওয়া হয়নি কিছুই। যুবকটির অভিযোগ, ‘‘আমার ওপর গ্রাহকের চাপ নেই। কিন্তু ওই সংস্থার কাছে আমার কয়েক লক্ষ টাকা পড়ে আছে। আমার ব্যবসার পুঁজিতে টান পড়েছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’

শ্যামপুরের একটি প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি বায়োগ্যাসের ডিলারশিপ নেওয়ার কথা ভেবে ১৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। সমিতির কর্তারা জানান, পুঁজি বেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা এখন চাষিদের ঋণ দিতে পারছেন না। অনেকবার দরবার করে মাত্র ১ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে তারা জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি যে দামে এলপিজি দেয়, তার চেয়ে কম দামে তারা বায়োগ্যাস দেবে। কিছু বিশিষ্ট মানুষ এই প্রকল্পে তাদের সঙ্গে আছেন বলেও প্রচার করে সংস্থাটি। সংস্থা আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনারে হাজির থাকতেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও।

কামদুনি-কাণ্ডে প্রচারের আলোয় উঠে আসা মৌসুমি কয়াল সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে মৌসুমী কয়ালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওখানে চাকরি করতাম মাত্র। কিন্তু দেখলাম, আমার নাম দেখে অনেকেই জমি, গয়না বিক্রি করে ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছেন। অথচ পরে তা ফেরত পাচ্ছেন না। আমার কাছে এসেও অনেকে এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আমার মনে হয়েছে, সংস্থাটি ভুয়ো। তাই কাজ ছেড়ে দিয়েছি।’’

সাঁকরাইলের প্রতারিত আমিরুল মোল্লা সম্প্রতি মধ্যমগ্রাম থানায় সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে সংস্থাটির বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে আর কেউ প্রতারিত না হন।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, রাজ্যের আরও বহু জায়গায় সংস্থার অফিস আছে। তদন্তের স্বার্থে সর্বত্র খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

বায়োগ্যাস সংস্থার মালিক জ্যোতিপ্রকাশ দাস বলেন, ‘‘আমাদের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনেকেই ব্যবসা করছেন। যাঁরা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে হয়তো আমাদের যথার্থ বনিবনা হয়নি। এ ক্ষেত্রে দু’তরফেই ত্রুটি থাকতে পারে।’’ তবে হুমকির অভিযোগ মানতে চাননি তিনি।

Allegation Forgery Bio Gas Company
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy