ফ্যাশন দুনিয়ায় গুচি নামের একটি ব্র্যান্ডের পোশাক-আশাক পরতে দেখা যায় হলিউড থেকে বলিউডের নামী তারকাদের, সেই সব পোশাকের দাম সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই ছত্রাকের নামের সঙ্গে সেই ব্র্যান্ডের নামের মিল রয়েছে। আর ও দিকে দামের বিচারেও তাকে ছত্রাক দুনিয়ার ‘গুচি’-ই বলা চলে! কারণ, সাধারণ মাশরুম যেখানে ২০০ টাকাতেই এক কেজি পাওয়া যায়, সেখানে এই মাশরুমের দাম কেজি প্রতি ৩৫-৪০ হাজার টাকা হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে তা ছুঁতে পারে ৫০ হাজারও!
সম্প্রতি ওই মাশরুমই পরিবেশন করা হয়েছিল ভারত সফরে আসা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাতে। কিন্তু কী এমন আছে এই মাশরুমে? যার জন্য তার দাম এত বেশি?
দিন দুই হল ভারত সফর সেরে দেশে ফিরেছেন পুতিন। তাঁর শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে রুশ প্রেসিডেন্টের সম্মানে বিশেষ আপ্যায়নের বন্দোবস্ত হয়েছিল। কূটনৈতিক ‘বন্ধু’ দেশের রাষ্ট্রনেতার জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মূ। ঢালাও খাওয়াদাওয়ার পুরোটাই অবশ্য নিরমিষ ছিল। তবে সেই নিরামিষ খাবারেও ছিল নানা রকমের চমক!
রাষ্ট্রপতি ভবনের মেনু কার্ডে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে রয়েছে ‘গুছি দুন সেতিন’!
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিখ্যাত আঞ্চলিক খাবার সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য। তাতে যেমন পশ্চিমবঙ্গের নলেন গুড়ের সন্দেশ ছিল, তেমনই ছিল পঞ্জাবের ডাল-তড়কা, দক্ষিণী জলখাবার মুরুক্কু, মহারাষ্ট্রের আচারি বেগুন এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের ঝোল মোমোও সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুতিনকে। তেমনই এক আঞ্চলিক খাবার ছিল ‘গুছি দুন সেতিন’! যা কি না জম্মু ও কাশ্মীরে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন:
রান্নাটি আসলে আখরোটের চাটনিতে ডোবানো পুরভরা মাশরুম। তবে এই রান্নার বিশেষত্ব শুধু এর রন্ধনপ্রণালীতে নয়, এর উপকরণেও। কারণ গুছি দুন সেতিন যে মাশরুম দিয়ে তৈরি, তা সহজলভ্য নয়। ওই ছত্রাক শুধু হিমালয়ের কোলে কিছু নির্দিষ্ট এলাকাতেই পাওয়া যায়। মূলত জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মাশরুম এতটাই বিরল যে এর প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকায়। কখনও সখনও এর দাম ৫০ হাজারও ছুঁতে পারে।
কেন এটি বিরল?
এই মাশরুম সহজে চাষ করা যায় না। কারণ এর জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রার দরকার পড়ে। সব মাটিতেও এটি বাড়ে না। হিমালয়ের কোলে বসন্তকালে সাধারণত এর দেখা মেলে। ঠিক তুষারপাত শেষ হওয়ার পরেই। তবে হিমলয়ের পাদদেশে জঙ্গলে দাবানল দেখা দিলেও আগুন নেভার পরে এই ধরনের ছত্রাক জন্ম নিতে পারে।
জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশের মানুষজন দিনের পর দিন পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে ওই ছত্রাক সংগ্রহ করেন। কারণ, এই ছত্রাক কয়েক সপ্তাহের জন্যই পাওয়া যায়। তা-ও আবার কোনও নির্দিষ্ট সময়ে নয়, প্রকৃতির খেয়াল হলে।
হয়তো সে কারণেই এই মাশরুমের দাম এত বেশি। দুনিয়ার সবচেয়ে দামি মাশরুমের তালিকায় অন্যতম হিসাবে শিরোপাও অর্জন করেছে এই ছত্রাক।
আরও পড়ুন:
কী কী উপকার?
এই মাশরুমে ভিটামিন ডি এবং বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন রয়েছে ভরপুর। এ ছাড়া রয়েছে খনিজ এবং প্রদাহনাশক উপাদান।
হিমালয় সংলগ্ন এলাকার মানুষজন ওই ছত্রাক ঔষধি হিসাবে ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লাগা, জ্বর-সর্দি-কাশি, পেটের রোগ এমনকি, শারীরিক কোনও আঘাত লাগলেও তা দ্রুত উপশমের জন্য এই ছত্রাক ওষুধ হিসাবে খাওয়ানো হয়।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় গুছি মাশরুমের ডায়াবিটিস এবং ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।
এ ছাড়া স্থানীয়েরা মনে করেন, শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং ত্বক ভাল রাখতেও সাহায্য করে এই ছত্রাকের জৈবসক্রিয় উপাদান।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে এই ছত্রাক।
কী কী রান্না হতে পারে?
রন্ধনশিল্পীদের কাছে এই ছত্রাকের চাহিদা রয়েছে। তার কারণ এর স্বাদ যে কোনও হালকা স্বাদের স্যুপ, ঝোল, কারির স্বাদ-গন্ধ বাড়িয়ে দিতে পারে। স্বাদে এবং দর্শনে অনেকটাই মাংসের মতো। তাই কাশ্মীরে এ দিয়ে পোলাও, ইয়াখনি, রোগনজোশও বানানো হয়। নিরামিষাশীদের জন্য এটি মাংসের ভাল বিকল্প হতে পারে। হয়তো সে জন্যই রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনের জন্য আয়োজিত নৈশভোজের পাতে জায়গা করে নিয়েছিল এই মাশরুম।