Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Stubble Burning

নাড়া পোড়ানোর বিকল্প ক্যাপসুল, ফয়দা চাষির

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দূষণ রোধের পাশাপাশি ক্যাপসুল ব্যবহারে বাড়তি লাভের কথা চাষিকে বোঝাতে হবে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

কেদারনাথ ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৪০
Share: Save:

নাড়া পোড়ানোর ক্ষতি অনেক। তা থেকে চাষি এবং পরিবেশকে বাঁচাতে এক ধরনের ক্যাপসুল বের করেছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। তারা বলছে, ওই ক্যাপসুল দিয়ে তৈরি মিশ্রণের মাধ্যমে নাড়াকে সারে পরিণত করা যায়। ফলে, লাভবান হন চাষি। দূষণও হবে না।

ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থানের (আইএআরআই) বিজ্ঞানীরা জানান, অনলাইনে বিভিন্ন রাজ্যে ক্যাপসুল পাঠানো শুরু হয়েছে। চাষিরা সরাসরি আবেদন করে তা কিনতে পারেন। তবে, বিষয়টি নিয়ে এ রাজ্যে এখনও চাষিদের তেমন ধারণা নেই। সরকারি প্রচারও নেই। এ ব্যাপারে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

এই ডি-কম্পোজড ক্যাপসুল কী?

আইএআরআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ক্যাপসুল জল, বেসন এবং গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে ঘোল তৈরি করা হয়। সেই মিশ্রণ সরাসরি জমিতে দেওয়া হয়। ফসলের অবশিষ্টাংশ, আনাজের খোসা, খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে জৈবসার তৈরি করা যায়। ওই ক্যাপসুল তরল অবস্থাতেও পাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরন্তন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফসলের অবশিষ্টাংশকে খুব সহজে ডিকম্পোজড ক্যাপসুলের মাধ্যমে জৈব সারে পরিণত করা যাচ্ছে।’’

রাজ্যে কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অন্ধকারে। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘নাড়া পোড়া একটি জাতীয় সমস্যা। নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে আমাদের রাজ্যে প্রচার চলছে। তবে কেন্দ্রের ক্যাপসুল নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সহজে চাষির কাছে ক্যাপসুল পৌঁছনো শুধু নয়, তা ব্যবহার করতে প্রশিক্ষণও দরকার। আমাদের জানানো হলে নিশ্চয়ই তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হত।’’

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দূষণ রোধের পাশাপাশি ক্যাপসুল ব্যবহারে বাড়তি লাভের কথা চাষিকে বোঝাতে হবে। কৃষি দফতরের প্রাক্তন যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা (ধান্য উন্নয়ন) মাধবচন্দ্র ধাড়া বলেন, ‘‘খড়কে জৈব সারে রূপায়িত করে ব্যবহার করলে চাষির লাভ অনেক। এর ফলে জমিতে গাছের যতরকম খাদ্য ও অনুখাদ্যের প্রয়োজন, তা এই জৈব সার থেকে পাওয়া যাবে। রাসায়নিক সার দেওয়ার প্রয়োজন কম হবে। চাষের খরচ অনেকটাই কমবে। তবে, এই ক্যাপসুল বা তরল কীভাবে চাষি কম দামে এবং সহজে পাবেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলেই বাংলার কৃষকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে।’’

ধান কাটার সঙ্গেই পরবর্তী ফসল চাষের জন্য জমি তৈরির কাজ তড়িঘড়ি শুরু করে দেন চাষি। বর্তমানে জমিতে ধান কাটা হচ্ছে। জমিতেই পড়ে থাকছে নাড়া। দ্রুত পরবর্তী ফসল চাষের জন্য সময় ও খরচ বাঁচাতে জমিতেই ওই নাড়া পুড়িয়ে দেন চাষি।

নাড়া পোড়ালে ক্ষতি কোথায়?

রাজ্য কীটতত্ত্ববিদ সন্তোষ রায় জানান, এতে জমির উপরিভাগের মাটি শক্ত হয়ে যায়। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। মাটির ভিতরে থাকা কেঁচো, বন্ধু পোকা, উপকারী জীবাণু মরে যায়। ফলে জমির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে ধোঁয়ায় দূষিত হয় পরিবেশ।

চাষিদের অনেকেরই বক্তব্য, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকাতেই তাঁরা নাড়া পোড়ান। বলাগড় ব্লকের টোনা গ্রামের চাষি পার্থ সেন বলেন, ‘‘সময় এবং খরচ বাঁচাতেই ক্ষতি জেনেও নাড়া পুড়িয়ে দিতে হয়। বিকল্পের কথা কেউ আমাদের বলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Decomposer Farmers Stubble Burning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE