অসচেতন: কারও মাস্কের বালাই নেই। শিশুর মুখ ঢাকা হয়েছে হাত দিয়ে। উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে হাওড়া জেলায় আশার আলো দেখাতে পারল না। বিশেষ করে ২ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত এই পাঁচ দিনে হু হু করে বেড়েছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা। অবশ্য মৃতের গড় হার সে ভাবে বাড়েনি। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। কিন্তু নতুন আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির হার চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য দফতরকে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রাখছি। গণ্ডিবদ্ধ এলাকা বাড়ানো হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।’’
গত ২ জুলাই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮২৬ জন। তার মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। কিন্তু এই তারিখের পর থেকেই বাড়তে থাকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। ৩ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯২৮। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০২। ৪ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০১০। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮২। ৫ জুলাই মোট আক্রান্তের
সংখ্যা ছিল ৩১২১। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১১। ৬ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২১৮। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৭। অর্থাৎ গত ৫ দিনে দৈনিক গড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯.৬।
আক্রান্তের দৈনন্দিন সংখ্যাতে বৃদ্ধি ঘটলেও অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা সেই অনুপাতে বাড়েনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত
অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৮২, ৮৫০, ৮৪৫, ৮৪২, ৮৪২। এর অর্থ সুস্থতার হার বাড়ছে। এই পাঁচ দিনে মোট মারা গিয়েছেন ১০ জন। মৃত্যুর দৈনিক গড় হল ২। এটাও জেলায় গত কয়েক মাসের মৃতের হারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জেলায় দিন প্রতি গড় মৃত্যুর হার ২ বা তার আশেপাশেই।
সুস্থতার হার বেড়ে যাওয়া বা মৃত্যুর হার থমকে থাকার মধ্যে আশার আলো আছে ঠিকই। তবে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আচমকা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। একটা সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আক্রান্তের হার বেশ বেড়ে যাচ্ছিল। এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আর সেই সমস্যা নেই বললেই চলে। এখন সংক্রমণ ঘটছে সাধারণ মানুষের মধ্যেই।
সম্প্রতি আমতা নাপিতপাড়ায় একসঙ্গে ২৯ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। একটি মহল্লায় একসঙ্গে এতজনের করোনা সংক্রণের ঘটনা শহর এলাকাতে ঘটলেও গ্রামীণ এলাকায় বিরল। এটাকে ‘গোষ্ঠী সংক্রমণ’ বলে স্বাস্থ্য দফতর না মানতে চাইলেও এই প্রবণতা বিপজ্জনক বলেই তাঁরা মনে করছেন।
কেন বাড়ছে সংক্রমণ?
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই সময়ে করোনা সংক্রমণ বাড়ারই কথা। জুন জুলাইকে বলা হয়েছে করোনার ‘পিক সিজন।’ তার উপরে লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। বাসে গাড়িতে ঘেঁষাঘেষি করে যাতায়াত করছেন। মাস্ক সঙ্গে থাকলেও তা গলায় ঝুলছে। নাক পর্যন্ত ঢাকা হচ্ছে না। স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে না। শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে লকডাউন শিথিল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ অন্যান্য নিয়মগুলি তো আর অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। সেগুলি যদি না মানা হয় তাহলে ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’
জেলায় সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে পাঁচটি করোনা হাসপাতাল আছে। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটতে থাকায় এখন উপসর্গহীন করোনা রোগীদের বাড়িতেই রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাতেও অনেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি। একইসঙ্গে তাঁরা জানান, মানুষ যদি সচেতন না হন, নিয়ম কানুন না মানেন, তাহলে সংক্রমণের বৃদ্ধি ঠেকানোর কোনও উপায় নেই।
গ্রামীণ এলাকায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে প্রশাসন নতুন করে প্রচারে নামার কথা জানিয়েছেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy