Advertisement
E-Paper

‘অমানবিক’ মাতৃযান, মৃত্যু ৮ মাসের শিশুর

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা আসিফা খাতুন নামে ওই শিশুটির মৃত্যুতে সেখানকার মাতৃযান-চালকদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০০:২০
মৃত: আসিফা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

মৃত: আসিফা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

জরুরি পরিষেবা দেওয়া তাঁদের কাজ। কিন্তু তাঁরা দাবি আদায়ে নেমেছিলেন আন্দোলনে। সকলে এতটাই ‘কঠোর’ ছিলেন যে আট মাসের মুমূর্ষু শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যেও ‘মানবিক’ হতে পারেননি! ফল, শিশুটির মৃত্যু।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা আসিফা খাতুন নামে ওই শিশুটির মৃত্যুতে সেখানকার মাতৃযান-চালকদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শিশুটির বাবা, উলুবেড়িয়ার গুমুখবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ আসাদুল হাসপাতালের সুপার-সহ প্রশাসনের নানা মহলে ওই অভিযোগ জানিয়েছেন। উলুবেড়িয়া থানাতেও অভিযোগ হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস। আজ, বুধবার সেই তদন্ত কমিটির সদস্যদের উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার কথা।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রকৃত ঘটনাটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অমানবিক ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না।’’ মৃতের বাবা আসাদুল বলেন, ‘‘মেয়েকে ফিরে পাব না জানি। আমি চাই যে সংস্থা মাতৃযান চালানোর বরাত পেয়েছে, তা যেন বাতিল করা হয়। মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়। তা হলে আর কোনও মায়ের কোল খালি হবে না।’’

পক্ষান্তরে, ওই হাসপাতালে ‘মাতৃযান’ চালানোর বরাত পাওয়া সংস্থার তরফে রাসিদুল রহমান অভিযোগ পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘সে দিন এমন কিছু ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। তেমন কিছুই হয়নি।’’ অথচ, হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘ওইদিন আচমকা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন মাতৃযান চালকেরা। জরুরি পরিষেবায় এটা করা যায় না। আমি ওঁদের অনুরোধ করেছিলাম, শিশুটির কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে একটা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে। ওঁরা শোনেননি।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সে দিন সকালে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত আসিফাকে ভর্তি করেন আসাদুল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। শিশুটিকে মাতৃযানে করে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। মাতৃযানের নম্বরও লিখে দেন। আসাদুল যাবতীয় কাগজপত্র হাসপাতালের মাতৃযান অফিসে জমা দেন। কিন্তু তার পরেই ‘হেনস্থা’র শুরু।

আসাদুলের অভিযোগ, কাগজপত্র নিয়ে মাতৃযান অফিস থেকে জানানো হয়, ধমর্ঘট চলছে। অ্যাম্বুল্যান্স যাবে না। এমনকী, কাগজপত্রগুলিও তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়নি। ফলে, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও ভাড়া করতে পারেননি আসাদুল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কাগজপত্র আটকে অ্যাম্বুলান্স-মালিকেরা আমাকেই সুপারের কাছে গিয়ে ওঁদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য তদ্বির করতে বলেন। আমি তা-ই করি। তবু, অ্যাম্বুল্যান্স বা কাগজপত্র মেলেনি। মেয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। আমি দু’পক্ষের হাতে-পায়েও ধরি।’’ কন্যাহারা বাবা জানান, সে দিন বিকেল ৪টের পরে মাতৃযান-মালিকদের ধর্মঘট ওঠে। তিনি তারপরে কাগজপত্র পেলেও অ্যাম্বুল্যান্স পাননি। এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে এর পরে তিনি মেয়েকে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে রওনা হন। কিন্তু পথে ধূলাগড়িতে শিশুটি মারা যায়।

‘‘সে দিন দেরি না হলে হয়তো মেয়ে বেঁচে যেত’’— এখনও মনে করেন আসাদুল। মেয়ের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার দু’দিন পরে তিনি সব মহলে অভিযোগ জানান। ওই হাসপাতালে মাতৃযান-মালিকদের ‘অমানবিক মুখ’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নিখরচায় রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই রাজ্য সরকারের মাতৃযান প্রকল্প। স্বাস্থ্য দফতর চুক্তির ভিত্তিতে বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে মাতৃযানগুলি ভাড়া নেয়। কিন্তু জরুরি পরিষেবা বন্ধ রেখে দাবি আদায়ে তাঁদের আন্দোলন কতটা যুক্তিপূর্ণ, উঠছে প্রশ্ন। সে দিন শিশুটির জন্য একটি মাতৃযানের ক্ষেত্রেও কী ধমর্ঘটে শিথিলতা দেখানো যেত না? — এ প্রশ্নও এখন চর্চায়।

Ambulance Asifa Khatun Inhumanity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy