Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

থানার পিছনে রমরমিয়েই অস্ত্র কারখানা

হাওড়া টিকিয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক পিছনের ঘিঞ্জি এলাকায় সঙ্কীর্ণ গলির মধ্যে দোতলা একটি বাড়ি। সে বাড়ি খুঁজতে গলির গোলকধাঁধায় হারিয়ে যেতে হয়। এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে এখন সেই বাড়িই।

তালাবন্ধ: এই বাড়িতে চলছিল অস্ত্র কারখানা।— নিজস্ব চিত্র।

তালাবন্ধ: এই বাড়িতে চলছিল অস্ত্র কারখানা।— নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

হাওড়া টিকিয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক পিছনের ঘিঞ্জি এলাকায় সঙ্কীর্ণ গলির মধ্যে দোতলা একটি বাড়ি। সে বাড়ি খুঁজতে গলির গোলকধাঁধায় হারিয়ে যেতে হয়। এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে এখন সেই বাড়িই। কারণ, সোমবার রাতের পুলিশি হানায় বাড়ির একতলায় ভাড়া নেওয়া একটি ঘরে হদিস মিলেছে একটি অস্ত্র কারখানার। উদ্ধার করা হয়েছে ৩০টি অসম্পূর্ণ নাইন এমএম পিস্তল, পিস্তল তৈরির যন্ত্রাংশ এবং একটি লেদ মেশিন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এই অস্ত্র কারখানা থেকেই পিস্তলের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়ে চলে যেত বিহারের মুঙ্গেরে। সেখানে যন্ত্রাংশ জোড়া লাগিয়ে তা সরবরাহ করা হতো এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।

টিকিয়াপাড়ার এই অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছে কলকাতা পুলিশের সৌজন্যে। এই খবর হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে ছিল না। বছর তিনেক আগেও দাশনগরের শানপুরের কাছে একটি অস্ত্র কারখানার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। তখনও অস্ত্র কারখানার খবর ছিল না হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে। সে বার হানা দিয়েছিল বিহার পুলিশ। এই দু’টি ঘটনা কার্যত প্রমাণ করে, হাওড়া আছে হাওড়াতেই।

কী ভাবে খোঁজ মিলল ওই কারখানার? পুলিশ সূত্রে খবর, পোস্তায় অস্ত্র পাচারের সময়ে কলকাতা পুলিশের হাতে মোর্সেলিন শেখ ও মহম্মদ সামসুদ ওরফে সাব্বির নামে দুই অস্ত্র পাচারকারী ধরা পড়ে। মোর্সেলিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা। সাব্বিরের বাড়ি বিহারের মুঙ্গেরে, বর্তমানে টিকিয়াপাড়ার নুর মহম্মদ মুন্সি লেনের ওই বাড়ির বাসিন্দা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বিরই ওই গোপন অস্ত্র কারখানার কথা কবুল করেন। এর পর কলকাতা পুলিশ সাব্বিরকে সঙ্গে করে হাওড়া পুলিশের সাহায্যে সোমবার রাতে ওই কারখানায় হানা দেয়। তালা ভেঙে ভিতর থেকে উদ্ধার হয় পিস্তলের যন্ত্রাংশ ও প্রচুর কাঁচা মাল। আটক করা হয় বাড়ির মালিক শেখ ইরশাদকে। সারা রাত জিজ্ঞাসাবাদের পরে মঙ্গলবার ইরশাদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ইরশাদের থেকে বছর দেড়েক আগে কারখানার জন্য ঘরটি ভাড়া নিয়েছিলেন শেখ ফিরোজ নামে এক যুবক। তাঁরও বাড়ি মুঙ্গেরে। তাঁকেই অস্ত্র কারখানার নাটের গুরু মনে করছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, মোর্সেলিন ও সাব্বিরের গ্রেফতারের খবর পেয়েই ফিরোজ মুঙ্গেরে পালিয়েছেন।

প্রশ্ন হল, পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক পিছনে কী করে চলছিল এই কারখানা? দিনের পর দিন কী ভাবে পাচারচক্র সক্রিয় ছিল?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার যে কোনও অনুষ্ঠানে মোটা টাকা চাঁদা দিত ফিরোজ। ফলে পাড়ার সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তার। স্থানীয় সূত্রে থেকে জানা গিয়েছে, ফিরোজ এবং সাব্বির ছাড়াও কারখানায় আরও তিন-চার জন যুবক কাজ করত। সপ্তাহে তিন-চারদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকত কারখানা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, কারখানা যখন খোলা থাকত তখনও সমস্ত দরজা-জানলা বন্ধ থাকত। কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না সেখানে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, আশপাশে অনেক লেদ কারখানা চলত বলে হয়ত সন্দেহ হয়নি কোনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arms Factory Police Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE