Advertisement
E-Paper

মণ্ডপের কাজেই মেয়ের তর্পণ

‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমাটি দেখেননি মণ্ডপ শিল্পী ধনঞ্জয় খেটো। সেখানে জোকারের মা মারা যাওয়ার পরেও কান্না চেপে রেখে তাঁকে স্টেজে উঠতে হয়েছিল। কারণ কারও ব্যক্তিগত শোকের জন্য কখনও শো বন্ধ থাকতে পারে না। এক টুকরো ‘মেরা নাম জোকার’ যেন নেমে এসেছে ধনঞ্জয়বাবু জীবনে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:১০
শিল্পী: ধনঞ্জয় খেটো। নিজস্ব চিত্র

শিল্পী: ধনঞ্জয় খেটো। নিজস্ব চিত্র

‘দ্য শো মাস্ট গো অন।’

‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমাটি দেখেননি মণ্ডপ শিল্পী ধনঞ্জয় খেটো। সেখানে জোকারের মা মারা যাওয়ার পরেও কান্না চেপে রেখে তাঁকে স্টেজে উঠতে হয়েছিল। কারণ কারও ব্যক্তিগত শোকের জন্য কখনও শো বন্ধ থাকতে পারে না। এক টুকরো ‘মেরা নাম জোকার’ যেন নেমে এসেছে ধনঞ্জয়বাবু জীবনে।

পেশায় সাইনবোর্ড শিল্পী ধনঞ্জয়বাবু বছর দশেক ধরে হাওড়ার বাগনানের বাঁটুল ক্লাবের পুজোর মণ্ডপসজ্জা করেন। এ বারও মাস তিনেক আগে মণ্ডপ ভাবনা ও রূপায়ণের কাজ শুরু করেছিলেন বছর পঞ্চান্নের এই শিল্পী। তাল কাটে কিছু দিন পরে। কাজ কিছুটা এগোনোর পরে তিনি খবর পান, তাঁর ২২ বছরের ছোট মেয়ে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। এই খবর শোনার পর থেকেই ধনঞ্জয়বাবু বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেন। পুজোর আয়োজকদের তখন দিশেহারা অবস্থা।

ক্লাবের সদস্য মলয় ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ধনঞ্জয়দার বাড়িতে গিয়ে বলি, আপনার যা মনের অবস্থা তাতে কাজ করার জন্য আপনাকে জোর করতে পারব না। তবে অন্য শিল্পীও আনব না। প্রয়োজনে অসম্পূর্ণ মণ্ডপেই পুজো হবে।’’ এই কথা শুনেই বিছানা থেকে উঠে বসেন ধনঞ্জয়। তাঁর কথায়, ‘‘১০ বছর ধরে এই ক্লাবের থিম আমি বানাই। অসম্পূর্ণ মণ্ডপে পুজো হবে এটা মানতে পারিনি। ঠিক করি, আমার মেয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফের মণ্ডপের কাজে হাত লাগাই।’’

বাঁটুল ক্লাবের এবারের থিম হল ‘গাছ বাঁচাও, প্রাণ বাঁচাও।’ মূল মণ্ডপ হল মাটির কুটির। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। তৈরি হয়েছে বিশাল বটগাছের মডেল। পরিবেশ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের চিন্তাভাবনার ছাপ রয়েছে মণ্ডপ ঘিরে। পুরো কাজটিই হাতেকলমে করেছেন ধনঞ্জয়বাবু। তাঁর বাড়ি কাছেই বাঁটুল ক্লাবের কাছেই রবিভাগ গ্রামে। এখন প্রতি দিন সকাল সাড়ে পাঁচটায় মণ্ডপের কাজ করতে চলে আসছেন তিনি। কাজ করছেন রাত ১১টা পর্যন্ত। ক্লাবের সদস্যরা ঠিক করেছেন, পুজো উদ্বোধনের দিনে তাঁরা ধনঞ্জয়বাবুকেও মানপত্র দেবেন।

তুলি হাতে মণ্ডপের শেষ পর্যায়ের কাজ করতে করতে ধনঞ্জয়বাবু বলছেন, ‘‘কাজ শেষ করতে করতেই মেয়ের মৃত্যুশোক অনেকটা ভুলেছি। বুঝতে পেরেছি সৃষ্টির মধ্য দিয়েই প্রতিটি মৃত্যু পুনর্জন্ম পায়।’’

Durga Puja 2017 Durga Puja Artist বাগনান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy