Advertisement
E-Paper

হাসপাতালেও বিস্ফোরণের আঁচ

জোড়াঘাটের কাছে বঙ্কিমের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির নাম ‘বন্দেমাতরম ভবন’। বিস্ফোরণে এই বাড়ির একাধিক জানলার কাচ ভেঙে যায়।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৬
লণ্ডভণ্ড: ভেঙেছে তামলিপাড়ার একটি নির্মীয়মাণ হাসপাতালের কাচ। নিজস্ব চিত্র

লণ্ডভণ্ড: ভেঙেছে তামলিপাড়ার একটি নির্মীয়মাণ হাসপাতালের কাচ। নিজস্ব চিত্র

ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যাটা তিনশোরও বেশি!

বৃহস্পতিবার নৈহাটিতে বিস্ফোরণের জেরে তীব্র কম্পনে গঙ্গার এ পাড়ে চুঁচুড়া শহরের তিনশোরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার এই মর্মে রিপোর্ট জমা পড়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। জোড়াঘাটের কাছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটিও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

বিস্ফোরণের পরেই চুঁচুড়া মহকুমাশাসক দফতরের বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ এবং পুরসভার আধিকারিকরা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে শুরু করেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, শুক্রবার সেই রিপোর্ট মহকুমাশাসক অরিন্দম বিশ্বাসের দফতরে জমা পড়ে। তিনি সেই রিপোর্ট জেলাশাসক দফতরে পাঠিয়ে দেন। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যা রিপোর্ট এসেছে, তাতে ৩২৭টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই রিপোর্ট আমরা রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। রাজ্যের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

জোড়াঘাটের কাছে বঙ্কিমের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির নাম ‘বন্দেমাতরম ভবন’। বিস্ফোরণে এই বাড়ির একাধিক জানলার কাচ ভেঙে যায়। আঞ্চলিক ইতিহাসের চর্চা করেন চুঁচুড়ার বড়বাজারের বাসিন্দা সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে হুগলিতে কর্মরত থাকাকালীন পাঁচ বছর বঙ্কিমচন্দ্র ওই বাড়ির দু’টি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এই ভবনেই বন্দে মাতরম-এ সুর দেওয়া হয়। সেই সময় বহু সাহিত্যিক-মনীষী এই বাড়িতে এসেছেন। বিস্ফোরণের জেরে ভেঙে যাওয়া অংশ অবিলম্বে সংস্কার করা হোক।’’ একই দাবি এলাকাবাসীরও। হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা। পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ওই ভবনের ভেঙে যাওয়া জানলার কাচ শীঘ্রই সারানোর জন্য পদক্ষেপ করা হবে।

বিস্ফোরণে শহরের চকবাজারে গৌরহাটি হরিজন বিদ্যামন্দিরের ভালই ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতির জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। নিরানব্বই বছরের পুরনো হিন্দি মাধ্যম এই স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। স্কুল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার টিফিনের বিরতির পরে পঞ্চম পিরিয়ড শুরুর মুখেই বিকট শব্দে স্কুল ভবন কেঁপে ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় দেওয়ালে ফাটল ধরে যায়। ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরাও রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।

শুক্রবার ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ক্লাসরুম থেকে বারান্দা, বিজ্ঞানের পরীক্ষাগার, মিড-ডে মিলের স্টোররুম, শৌচাগার— সব জায়গাতেই দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। চিড় ছাদের বিমেও। একটি ঘরে তালা লাগানোর কব্জা ভেঙে যায়। প্রধান শিক্ষক শিউবদন যাদব বলেন, ‘‘যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি। প্রশাসনের তরফে বিশেষজ্ঞরা দেখে যা বলবেন, সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’ নবম শ্রেণির পড়ুয়া করণ প্রসাদ, যশকুমার মাহাতোদের কথায়, ‘‘কবে স্কুল খুলবে, বুঝতে পারছি না। তাড়াতাড়ি না খুললে পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

এ দিনও শহর জুড়ে সর্বত্রই বিস্ফোরণের অভিঘাত নিয়ে চর্চা চলেছে। তামলিপাড়ায় হুগলি জেলা রেড ক্রস সোসাইটির ভবন রয়েছে। সংস্থার সম্পাদক জ্যোৎকুমার দাস বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের সময় আমি এখানে ছিলাম না। এসে দেখি জানলার কাচ ভেঙে আমার ঘরময় ছড়িয়ে আছে। ঘরে থাকলে নির্ঘাৎ মারা পড়তাম।’’ তামলিপাড়াতেই একটি হাসপাতালে নির্মীয়মাণ আইসিইউ বিভাগ এবং পাশের একটি ঘরের জানলার কাচ চুরমার হয়ে যায়। দেওয়াল থেকে আলো খুলে পড়ে। এ দিনও সেই কাচ ছড়িয়ে ছিল। হাসপাতালের তরফে অরিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভাগ্যিস কেউ ঘরে ছিলেন না সেই সময়! কয়েক সেকেন্ডেই সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল ওই কম্পনে!’’

Bankim Chandra Chatterjee Blast Cases Chinsurah Chinsurah Hospitals Explosion Cases Naihati Explosion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy