Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গুলি-বন্দুকে লাগাম নেই বাঁশবেড়িয়ায়, বাড়ছে আশঙ্কা-উদ্বেগও  

রবিবার রাতে বাঁশবেড়িয়ায় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে জখম হলেন এক যুবক। প্রথম ঘটনাটি ঘটে চন্দননগর কমিশনারেট এলাকায়। দ্বিতীয়টি গ্রামীণ পুলিশের এলাকাধীন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

ব্যবধানটা মাত্র দশ দিনের। ফের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারে রক্ত ঝরল হুগলিতে।

গত ১২ জুলাই ভরসন্ধ্যায় কোন্নগরে এক যুবতী গুলিতে খুন হয়েছিলেন। রবিবার রাতে বাঁশবেড়িয়ায় লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে জখম হলেন এক যুবক। প্রথম ঘটনাটি ঘটে চন্দননগর কমিশনারেট এলাকায়। দ্বিতীয়টি গ্রামীণ পুলিশের এলাকাধীন।

হুগলির দুই প্রান্তে এই দুই ঘটনায় অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে। দু’জনের কেউই তথাকথিত ‘দুষ্কৃতী’ নয়। তা সত্ত্বেও তাদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। জেলা জুড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের এই রমরমায় উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। বাঁশবেড়িয়ার ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ দলুইয়ের ক্ষোভ, ‘‘সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছুই থাকছে না। কোনও দিন তো কাজ থেকে ফেরার পথে কোনও অপরাধ না-করেও গুলিতে খুন হয়ে যেতে পারি! এত আগ্নেয়াস্ত্র চতুর্দিকে!’’

আগ্নেয়াস্ত্রের অবাধ জোগান ভাবাচ্ছে পুলিশকেও। পুলিশকর্তারা জানান, সামগ্রিক ভাবেই অস্ত্র-জোগানের পথ খুঁজে বের করে তা বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে নিয়মিতই অভিযান এবং ধরপাকড় চলছে। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘বাঁশবেড়িয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে পেল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে গুলি দেখে মনে হয়েছে সেটি

ওয়ান শটার।’’

কী করে আগ্নেয়াস্ত্র এত সহজলভ্য হচ্ছে? পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গিয়েছে, তথাকথিত দুষ্কৃতী নয়, এমন লোকেরাও কোনও অনর্থ ঘটানোর পরিকল্পনা করলে চেনা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্ত্র কিনে ফেলছে। সেভেন এমএম বা নাইন এমএম-এর দাম বেশি হলেও ওয়ান শটারের দাম মোটামুটি আয়ত্তের মধ্যেই। ফলে, কোনও দিক থেকেই সমস্যা থাকছে না।

কোন্নগরে যুবতী খুনের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের জোগানদার সন্দেহে বাগখালের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, পুলিশের খাতায় আগে তার নাম না-থাকলেও তদন্তে দেখা গিয়েছে, টিটাগড়, নৈহাটি এলাকার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তার যোগ ছিল। বছর দেড়েক আগে শ্রীরামপুরে বোনকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে দাদার বিরুদ্ধে। হুগলির কানাগড়ে মদ খাওয়ার প্রতিবাদ করায় এক পরিচিত দুষ্কৃতীর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়া করে এনে মাকে গুলি করে মারার অভিযোগ ওঠে যুবকের বিরুদ্ধে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

সূত্রের খবর, জেলায় নানা জায়গায় প্রোমোটিং, জমির দালালিতে যুক্ত থাকে দুষ্কৃতীরা। তোলাবাজি চালায়। এই সব কাজে তাদের প্রধান সহায়ক আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের মাধ্যমেই আনকোরা বা দুষ্কৃতী নয় এমন ছেলেদের হাতে অস্ত্র চলে আসে। বাঁশবেড়িয়ার এক রাজনৈতিক নেতার দলবল অস্ত্র কারবারে ওস্তাদ বলে কান পাতলে শোনা যায়। আর দাগি দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্রের জোগানের জন্য তো দীর্ঘদিন ধরে মুঙ্গের-সহ ভিন রাজ্যের কিছু জায়গা রয়েছেই। অস্ত্র কেনাবেচার সূত্রে হুগলির দুষ্কৃতীদের সঙ্গে গঙ্গার উল্টো পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার দুষ্কৃতীদের যোগ রয়েছে।

জেলার এক বর্ষীয়ান পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘বন্দুক যতটা না চালাতে কাজে লাগে, তার থেকে বেশি প্রয়োজন হয় ধমকাতে-চমকাতে। ফলে, অস্ত্রের চাহিদা কমে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firearms Bansberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE