গ্রেফতার: আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতকে। নিজস্ব চিত্র
বুথ দখলের লড়াইয়ে পুলিশের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে প্রশ্নটা রয়েই গিয়েছে। তারই মধ্যে হিসাব বলছে, মার খেয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। অনেকেই জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার বিকেলে পুরশুড়ার ডিহিবাতপুরে দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন এক জওয়ান। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে দুর্গাপুর ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের জওয়ান পবিত্র মণ্ডলকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে কিঙ্কর মাইতি নামে এক বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-সহ ১৭ জনকে। কিঙ্কর বা তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অন্য একটি বুথে নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট হিসাবে কাজ করছিলেন কিঙ্কর। তাঁকে ষড়যন্ত্র করেই ফাঁসানো হয়েছে।
পুরশুড়ার ডিহিবাতপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৪২ নম্বর বুথে সকাল ৮টা থেকে দফায় দফায় অশান্তি হয়। ১১টা নাগাদ শুরু হয় বোমাবাজি। তখন পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ভোট ব্যহত না হলেও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হুমকি দেওয়া চলছিলই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিকেল ৪টে নাগাদ বুথের খুব কাছে কয়েকটি গাড়িতে জনা ২০-২৫ জন লোক আসে। গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে বোমা ফাটাতে ফাটাতে তারা বুথে চড়াও হয়। ভোটাররা পালান। প্রতিরোধ আসে গ্রামের ভিতর থেকেও। একদল যুবক ডিহিবাতপুর ভিতর থেকে বোমা-বাঁশ-লাঠি নিয়ে দৌড়ে আসে। গ্রামের এক নির্দল সমর্থকের কথায়, ‘‘পরে দেখা যায় পুলিশ শুধু আমাদের গ্রামের লোকেদের মারছে। আমরা ভাবি, বহিরাগতদের বুথ দখলে সাহায্য করছে পুলিশ। তাই তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়।’’ সেই ইটের আঘাতেই জখম হন পবিত্র মণ্ডল।
ওই রাতেই পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে ব্লকের প্রথম সারির তৃণমূল নেতা কিঙ্কর মাইতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত তোলার পথে কিঙ্কর বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ ভয়ঙ্কর মারধর করেছে। সারাদিন ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে ৪০ নম্বর বুথে নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট ছিলাম।” মঙ্গলবার আরামবাগ আদালতে সকলেরই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।
তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘কিঙ্কর মূল দলের নেতা হলেও বিক্ষুব্ধ। তিনি চেয়েছিলেন দলের যোগ্য প্রার্থীরাই টিকিট পান। তা হয়নি। তারই জেরেই এই ভাবে ফাঁসানো হল তাঁকে।’’ কিঙ্করের স্ত্রী সুলেখা মাইতি অবশ্য স্পষ্ট করেই বলেন, “দলের বেশ কিছু অযোগ্য প্রার্থী টিকিট পাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন কিঙ্কর। ভোটেও তার প্রতিফলন পড়ছিল। তাই তাঁকে শায়েত্তা করতে দলের প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান, ব্লক সভাপতি জয়দেব জানা পরিকল্পনা করে ফাঁসিয়েছে।’’ এ নিয়ে পারভেজ রহমান এবং জয়দেব জানারা মন্তব্য করতে চাননি। পারভেজ বলেন, “জেলা সভাপতি বলবেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “পুলিশকে মারধরের ঘটনা অত্যন্ত অন্যায়। যে দলেরই হোন, শাস্তি হবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy