Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

খোঁজ খোঁজ কই গোঁজ, হুগলিতে হিমসিম তৃণমূল

দলের গোঁজ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে শনিবার রীতিমতো হিমসিম খেলেন হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অনেক জায়গায় খুঁজে গোঁজ প্রার্থীদের ধরে এনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হলেও ওই কাঁটা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলল কই!

চাপ: মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন আরামবাগের এক তৃণমূল যুবনেতা।—নিজস্ব চিত্র

চাপ: মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন আরামবাগের এক তৃণমূল যুবনেতা।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৬
Share: Save:

খোঁজ, খোঁজ, খোঁজ!

দলের গোঁজ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে শনিবার রীতিমতো হিমসিম খেলেন হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অনেক জায়গায় খুঁজে গোঁজ প্রার্থীদের ধরে এনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হলেও ওই কাঁটা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলল কই! কেননা, বিকেল ৩টে পর্যন্ত অনেকেই ‘বেপাত্তা’ ছিলেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বই মেনে নিয়েছেন।

আরমবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের ২২১টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫টি আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই। কিন্তু তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী ছিল যথাক্রমে ৯৪টি এবং ১৪টি। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত পঞ্চায়েতের ১৬টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসনে মনোনয়ন‌ প্রত্যাহার হয়। তৃণমূল শিবিরের খবর, বাকিরা ‘উধাও’ হয়ে যান। ফলে রাত থেকেই তল্লাশিতে নামতে হয়। প্রার্থীপিছু ৫ থেকে ১০ জনের দল। বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েও খোঁজ চলে বলে অভিযোগ প্রার্থীদেরই।

আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল নেতার কথায়, এক গোঁজপ্রার্থীকে বহু চেষ্টা করে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শেষে পুলিশ তাঁর খোঁজ এনে দেয়।’’ বাতানল পঞ্চায়েতের আসনে এ দিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন শাসকদলের সরিফা বেগম, সফুরা বেগম। তাঁদের কথায়, ‘‘অপরাধী ধরার মতো আমাদের খুঁজছিলেন নেতা এবং পুলিশ।’’ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান স্বপন সাধুখাঁ বলেন, ‘‘এখন নিশ্চিন্ত হলাম। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হল।’’ তিরোল পঞ্চায়েতের এক প্রার্থীর গলায় বিস্ময়, ‘‘দু’টো ফোন বন্ধ রেখেও ধরা পড়ে গেলাম!’’

এত কিছু সত্ত্বেও ওই ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েতে ২৫ জন গোঁজ প্রার্থী রয়ে গেলেন বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। দলের ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দীরই খেদ, ‘‘অনেকেই বাঁকুড়া, কোতুলপুর, বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় তাঁদের আনা যায়নি।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ কাউকে খুঁজতে যায়নি। প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা, খোঁজ নিতে গিয়েছিল।’’ পুলিশেরও একই বক্তব্য।

শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের রিষড়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুই গোঁজ প্রার্থীর বাড়িতে দলের লোকজন হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। পান্ডুয়া ব্লকে গোঁজ প্রার্থীদের মনোনয়ন তোলাতে শেষ দিনেও রীতিমতো ঘাম ঝড়াতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি অসীমা পাত্র নিজেই পান্ডুয়া ব্লক অফিসে চলে আসেন। তৃণমূল শিবিরের খবর, ওই অফিসে বসেই দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের ‘ধমকে’ মনোনয়ন তোলার ব্যবস্থা করতে হয় তাঁকে। অসীমা বলেন, ‘‘দলের অনুমোদন ছাড়া যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের উপদেশ দিতে এসেছি।’’ তাঁর দাবি, এ দিন পান্ডুয়ায় ৯০ শতাংশ গোঁজ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।

তবু, সব মিলিয়ে হুগলিতে গোঁজ-কাঁটা শাসকদলকে পদে পদে বিঁধেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE