Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Birds's house

আমি থাকি মহাসুখে ‘কার্নিশ’ পরে

কয়েক দশক আগেও কিন্তু পাখিদের বাসা বাঁধতে এমন বিপদে পড়তে হয়নি। শহরাঞ্চলেও ভোর হতে না হতেই নানা  পাখির ডাক শোনা যেত।

আশ্রয়: বালতিতেই বাসা পাখিদের। নিজস্ব চিত্র

আশ্রয়: বালতিতেই বাসা পাখিদের। নিজস্ব চিত্র

তাপস ঘোষ
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

বাড়ির জানলার কার্নিশের নীচে বালতি আটকে রাখা। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও, গাছের অভাবে এখানেই নতুন করে ঘর বাঁধছে দোয়েল, বুলবুলি, চড়াইরা। নেপথ্যে রয়েছেন ব্যান্ডেলের পানু পাল। সামান্য উপকরণে তিনি ঘরেই গড়ে তুলেছেন ছোটখাট পাখিরালয়।

কয়েক দশক আগেও কিন্তু পাখিদের বাসা বাঁধতে এমন বিপদে পড়তে হয়নি। শহরাঞ্চলেও ভোর হতে না হতেই নানা পাখির ডাক শোনা যেত। এখন কোকিলের ডাক, কুব পাখির কুব কুব, কাঠঠোকরার কাঠ কাটার আওয়াজ কিংবা কাক, চড়াই, দোয়েলের কাকলি আর কানে আসে না। বড় গাছের অভাবে ঘর ছাড়া হয়েছে অনেক পাখি।

তাঁদেরই জন্যই কৃত্রিম ঘর বানিয়ে দিয়েছেন পানুবাবু। পেশায় গ্যাস ওভেন সারানো-সহ বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। সকাল হলেই যন্ত্রপাতির ঝোলা বাইকে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েন কাজে। পাখিদের জন্য আশ্রয় তৈরি করার কথা মাথায় এল কীভাবে? পানুবাবু জানালেন, এক শ্রেণির মানুষ ক্রমাগত গাছ কেটে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বানিয়ে চলেছেন। তাঁরা কেউ পাখিদের কথা ভাবেন না। নিজেদের বাড়ি তৈরি করার জন্য পাখিদের বাসা নষ্ট করছেন। এই আশ্রয়হীন পাখিদের জন্য তিনি বাড়ির কার্নিশের নীচে একটি করে বালতি রেখে তাতে খড়কুটো দিয়ে কৃত্রিম বাসা বানিয়ে দেন। তবে শুরুতেই যে সফল হয়েছেন তা নয়। প্রথম প্রথম পাখিরা বেশ ভয় পেত। তবে কয়েকদিন যেতে না যেতেই দু’একটা পাখি সেখানে সংসার পাতা শুরু করে। উৎসাহ পেয়ে পানুবাবু পাখির বাসায় খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এখন তো খাবার দেওয়ার সময় হলেই পাখিরা বাসায় এসে হাজির হয়। কিছুদিন আগে তাঁর পাখিরালয়ে দোয়েলপাখির ছানাও হয়েছে। এখন সকাল হলেই তাদের কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙে পাল পরিবারের।

পানুবাবুর এই পাখিরালয়ের কূজন শুনে স্থানীয় বাসিন্দারাও দারুণ খুশি। তাদের কথায়, এখন সকাল হলেই পানুবাবুর পাখিরালয় থেকে পাখির ডাক ভেসে আসে।

পানু বলেন, ‘‘একদিকে সবুজকে ধ্বংস করে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুতের তারে আটকে পাখিদের মৃত্যু ঘটছে। গাছে আশ্রয় নেওয়া পাখিরা একটু আশ্রয়ের খোঁজে এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায়। তাই ওদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা শেফালি মজুমদার বলেন, ‘‘পানুবাবুর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। মানুষ নিজের বাসস্থান তৈরি করার জন্য গাছপালা কেটে ফেলেছেন। কিন্তু এই অসহায় পাখিদের কথা কেউ চিন্তা করেন না। ভোরের আলোয় পাখির কূজন শুনতে তো সকলেরই ভাল লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birds's house Bandel Tree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE