Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেপথ্যে বালি খাদান, সংঘর্ষ বিজেপি-তৃণমূলে

মুণ্ডেশ্বরীর বালি খাদানের দখল নিয়ে আরামবাগে সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূল-বিজেপি। বাড়ি ভাঙচুর হল, লাগানো হল আগুন। পশ্চিম মেদিনীপুরে নারায়ণগড় ও বর্ধমানের কালনাতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দশক ধরেই মুণ্ডেশ্বরীর দু’পারে খাদান থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে বিক্রি নিয়ে হরিণখোলা ১ ও ২ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সিপিএম, সিপিআই, কংগ্রেস। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে আসরে নেমেছিল তৃণমূল। নতুন শক্তি হিসেবে উত্থানের পরে বিজেপি-ও সেই জুতোয় পা গলিয়েছে।

আরামবাগের পূর্ব কৃষ্ণপুরের বাড়িতে আগুন। ছবি: মোহন দাস

আরামবাগের পূর্ব কৃষ্ণপুরের বাড়িতে আগুন। ছবি: মোহন দাস

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

মুণ্ডেশ্বরীর বালি খাদানের দখল নিয়ে আরামবাগে সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূল-বিজেপি। বাড়ি ভাঙচুর হল, লাগানো হল আগুন। পশ্চিম মেদিনীপুরে নারায়ণগড় ও বর্ধমানের কালনাতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে।

কয়েক দশক ধরেই মুণ্ডেশ্বরীর দু’পারে খাদান থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে বিক্রি নিয়ে হরিণখোলা ১ ও ২ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সিপিএম, সিপিআই, কংগ্রেস। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে আসরে নেমেছিল তৃণমূল। নতুন শক্তি হিসেবে উত্থানের পরে বিজেপি-ও সেই জুতোয় পা গলিয়েছে। রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কিছু গ্রামে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠ হয়। চারটি বাড়ি ও পাঁচটি খড়ের গাদায় আগুন লাগানো হয়। পুলিশ ও র্যাফ অবস্থা সামলায়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আগুন নেভায়। এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “পুলিশ পিকেট বসেছে।”

পুলিশি সূত্রে খবর, বেআইনি বালি কারবারের মূল অভিযুক্ত জয়নাল খাঁ নামে এক নেতা। যিনি বারবার দল বদলেছেন। সত্তর দশক থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত জয়নাল ছিলেন সিপিএমে। তার পরে সিপিআইয়ে। ২০১১-য় বামেরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে তিনি সদলবল কংগ্রেসে যান। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ বাধে। সেই জয়নাল দলবল নিয়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন বলে খবর ছড়াতেই ফের গোলমাল বেধেছে।

রবিবার রাতে জয়নালের কিছু লোকজনকে নিয়ে হুল্লোড় করছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা। পুলিশ জেনেছে, কিছু বোমাও ফাটানো হয়। তৃণমূল সমর্থকদের সন্দেহ হয়, জয়নাল এলাকা দখলে নেমেছেন। তৃণমূলের দুই কর্মী মার খান। পুলিশ পরিস্থিতি সামালালেও সোমবার ফের উত্তেজনা ছড়ায়। দর্জিপোতা, সাহাবাগ, গোলামিচক, অরুণবেড়া, মধুরপুরের মতো গ্রাম থেকে শ’দুয়েক সশস্ত্র যুবক এসে জয়নালের বাড়ি-সহ ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর-লুঠপাট চালায়।

জয়নাল বিজেপি-তে যাওয়ার কথা মানেননি। তাঁর অভিযোগ, “আমার মজবুত সংগঠন ভেঙে অরাজকতা কায়েম করতেই তৃণমূল বারবার হামলা করছে।” তবে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব সূত্রের খবর, জয়নালের গতিবিধি নিয়ে তাঁরাও ধোঁয়াশায়। তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু ঘোষের দাবি, “জয়নালের ছেলেরা বিনা প্ররোচনায় আমাদের দুই কর্মীকে মারধর করায় গ্রামবাসীরাই প্রতিরোধ করেছেন।” বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, “ওই গ্রামের কিছু মানুষ বিজেপিতে এসেছেন। তাই ওদের রাগ।” আজ, মঙ্গলবার বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের তরফে একটি দল গ্রামে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

রবিবারই নারায়ণগড়ের কিছু বিজেপি সমর্থক পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের চাষবাসে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। রাতে তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর হয়। এ দিন তাঁরা নারায়ণগড় থানায় তৃণমূলের ১৫ জনের নামে অভিযোগ জানান। রবিবার সন্ধ্যাতেই কালনার বেগপুর পঞ্চায়েতের খোরদা-বিটরায় বিজেপির সভায় হামলা চালানোর, বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কালনা থানায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ দিন বিজেপির রাজ্য পর্যায়ের প্রতিনিধি দল গ্রামে ও কালনা হাসপাতালে যান। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE