Advertisement
E-Paper

হোটেলে তরুণীর দেহ, উদ্ধার দেড় মাসের সন্তান

বুধবার রাতে একনাগাড়ে শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে হোটেলের কর্মীদের সন্দেহ হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০০:৫৯
পিঙ্কি বারি

পিঙ্কি বারি

ত্বকের চিকিৎসককে দেখাবেন বলে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন লিলুয়ার এক তরুণী গৃহবধূ। রাতেই তাঁর মৃতদেহ মিলল হুগলির ডানকুনি এলাকার হাউজিং মোড়ের কাছে একটি হোটেলের ঘর থেকে। দেহের পাশ থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ওই তরুণীর দেড় মাসের ছেলেকে। মৃতার নাম পিঙ্কি বারি (২৩)। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীকে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। ঘর থেকে মিলেছে একটি মদের বোতল। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই তরুণী এক যুবকের সঙ্গে সেখানে এসেছিলেন। সেই যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, ওই যুবকই তরুণীকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে একনাগাড়ে শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে হোটেলের কর্মীদের সন্দেহ হয়। অনেক ডাকাডাকিতেও কেউ সাড়া না দেওয়ায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায়, ওই তরুণী মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। পাশে মাস দেড়েকের শিশু। শিশুটিকে রাতেই পাঠানো হয় একটি বেসরকারি হোমে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পিঙ্কি বারি নামে ওই তরুণীর বাড়ি লিলুয়া থানার ভট্টনগর গোলবাড়ির দুর্গামন্দির এলাকায়। তাঁর বছর পাঁচেক বয়সী আরও একটি ছেলে রয়েছে। ওই রাতেই লিলুয়া থানাকে খবর পাঠায় হুগলি পুলিশ। লিলুয়া থানা খবর পাঠায় তরুণীর বাড়িতে।

পুলিশ জানায়, বছর ছ’য়েক আগে পিঙ্কির বিয়ে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সাগর বারির সঙ্গে। সাগর পেশায় নির্মাণকর্মী। বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। বৃহস্পতিবার ভট্টনগরে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করেছেন বাড়ির সামনে। দু’কামরার বাড়িতে মেয়ে-জামাই, দুই নাতি-নাতনি, ছেলে-বৌমা ও ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকেন পিঙ্কির মা মেনকা ঘোষ। এ দিন মেনকাদেবী জানান, জয়সওয়াল হাসপাতালে ত্বকের ডাক্তার দেখাতে যাবেন বলে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পিঙ্কি ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন। স্বামী ও তাঁর দাদার স্ত্রীকে জানিয়ে যান, বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেও ওই তরুণী বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন পরিজনেরা তাঁর খোঁজখবর শুরু করেন। সন্ধ্যা থেকে তাঁর মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। শেষে রাতে লিলুয়া থানা থেকে তাঁরা পিঙ্কির মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পান।

মেনকাদেবী বলেন, ‘‘ও মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। কোথায় যেত, জানি না। সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসত।’’ এ দিকে, স্ত্রীর সঙ্গে কারও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা মানতে নারাজ তরুণীর স্বামী সাগর। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে কারও কোনও সম্পর্ক ছিল না। যে এই কাজ করেছে, তাকে গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দিতে হবে।’’

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বুধবার দুপুর একটা নাগাদ হোটেলের তিনতলার ৪১৯ নম্বর ঘরটি ভাড়া নেন ওই তরুণী ও তাঁর সঙ্গী যুবক। হোটেলে নিজেদের তাঁরা স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। রেজিস্টারে তরুণী তাঁর নাম লিখেছিলেন পূজা ঘোষ। পুলিশ জানায়, এ দিন ওই বধূর স্বামী স্ত্রীর দেহ শনাক্ত করেন। শ্রীরামপুরের একটি হাসপাতালে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

যে হোটেলে এই ঘটনা ঘটেছে, সেটির মালিক প্রবীর ভাণ্ডারী বলেন, ‘‘আমরা ভোটার কার্ড দেখেই ওই যুবককে হোটেলটি ভাড়া দিয়েছিলাম। কে, কী উদ্দেশ্য নিয়ে হোটেলে আসছেন, তা আমরা কী করে জানব?’’ চন্দননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই বধূর গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছে। পলাতক যুবকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ হোটেলের কর্মীরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ পিঙ্কির সঙ্গী যুবককে হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন তাঁরা। ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি থেকে যে নাম-ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে, তার সূত্র ধরে ওই যুবকের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।

Murder Housewife
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy