দুরবস্থা: ভাগাড়ের জঞ্জালের ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। ছবি: তাপস ঘোষ
আবর্জনার দুর্গন্ধ তো আছেই, তার সঙ্গে মিশেছে ধোঁয়া।
দুইয়ে মিলে প্রাণ ওষ্ঠাগত চন্দননগরের ভাগাড় লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে ভাগাড়ের বর্জ্য নিষ্কাশনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সমস্যার প্রতিকার না-হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন। আটকে দেওয়া হল ভাগাড়মুখী জঞ্জালের গাড়ি। পোস্টারে পড়ল, ‘বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে বাঁচতে চাই’। ফিরিয়ে দেওয়া হল দমকলের একটি ইঞ্জিনকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরগরম রইল এলাকা।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। চন্দননগর পুরসভার এক প্রতিনিধি দলও পৌঁছয়। তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। শেষে, বেলা আড়াইটে নাগাদ পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প দ্রুত তৈরির আশ্বাস দেন। তার পরেই বিক্ষোভ থামে। পুর-কমিশনার বলেন, ‘‘ভাগাড়ের জমিতে প্রস্তাবিত কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প যাতে শীঘ্রই গড়া যায়, সেই চেষ্টা চলছে। প্রকল্পটি তৈরি হলেই সমস্যা মিটে যাবে। বিষয়টি এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে বলেছি। তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে, বেশি ধোঁয়া উঠলে তাঁরা যেন আমাদের দফতরে জানান। সে ক্ষেত্রে দমকলের গাড়ি পাঠিয়ে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’
চন্দননগরের কলুপুকুরে রেল লাইন সংলগ্ন জায়গায় ভাগাড় রয়েছে। শহরের সমস্ত জৈব-অজৈব আবর্জনা এখানে এনে ফেলা হয়। ভাগাড়ের কয়েক একর এলাকা জুড়ে জঞ্জালের পাহাড় হয়ে গিয়েছে। ভাগাড় সংলগ্ন ৮, ৯ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েক হাজার মানুষের বাস। তাঁদের অভিযোগ, শুধু আবর্জনাই নয়, কুকুর, বেড়াল, গরু-সহ অন্যান্য মৃত পশুর দেহ এখানে ফেলা হয়। তাতে কটূ গন্ধ ছড়ায়। শুধু তা-ই নয়, আবর্জনায় আগুন ধরে বিষাক্ত ধোঁয়া বেরোতে থাকে। এ থেকেও মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, দূষণের চোটে রাস্তায় হাঁটাচলা দায়। বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বার বার পুর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে তাঁদের অভিযোগ।
পরিবেশকর্মী এবং চিকিৎসকেরা জানান, আবর্জনায় আগুন লাগলে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। তাতে আগুন ধিকিধিকি জ্বলতেই থাকে। ধোঁয়া বেরোতে থাকে। প্লাস্টিক পুড়ে ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণ হয়। ধোঁয়ার বিষাক্ত গ্যাস মানুষের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা, এমনকী ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, আগে এখানে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপনের জন্য ‘ভার্মি কম্পোজড প্ল্যান্ট’ তৈরি করা হয়েছিল। এতে দূষণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উড়ালসেতু তৈরির সময় ওই প্রকল্প ভেঙে দেওয়া হয়। তখন থেকেই সমস্যা বাড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী ভাগাড়ের গেটের সামনে জড়ো হন। বাঁশ ফেলে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। তাতে পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাগাড় থেকে প্রচুর ধোঁয়া বেরোচ্ছে। শহরের নানা জায়গা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে যে সমস্ত গাড়ি ভাগাড়ের দিকে আসছে, রাস্তায় সেগুলি আটকে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে গোটা পনেরো গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ তোলেন, বুধবার ভাগাড়ের আবর্জনা পুড়ে প্রচুর পরিমাণ ধোঁয়া বেরোয়। তাতে চার জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। চন্দননগর হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা করাতে হয়। সুলতা পাসোয়ান নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ভাগাড়ের বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রশাসন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলছে। কিন্তু আমরা তো ভয়ঙ্কর দূষণের মধ্যে বাস করছি। প্রশাসন এই নরককুণ্ড থেকে আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করুক।’’ নন্দ সাঁতরা নামে আর এক ভুক্তভোগীর কথায়, ‘‘বিষাক্ত ধোঁয়ায় বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আমরা অতিষ্ঠ।’’ অবিলম্বে পরিবেশ দূষণ বন্ধের দাবি ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy