Advertisement
E-Paper

‘ঠুঁটো’ পুলিশ-পুরসভার জন্যই বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা

দুর্ঘটনা ঘটে। ভুগতে হয় সাধারণ মানুষ থেকে পথচারীদের। কিন্তু যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা নির্বিকার। আর প্রশাসনের এই মনোভাব নিয়েই উষ্মা, অভিযোগ মানুষের।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৭:১৮
রাস্তায় ফেলা রয়েছে বালি। বাঁশবেড়িয়ার বেলতলায় (বাঁদিকে)। ডানদিকে, বারুইপাড়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার ও দীপঙ্কর দে।

রাস্তায় ফেলা রয়েছে বালি। বাঁশবেড়িয়ার বেলতলায় (বাঁদিকে)। ডানদিকে, বারুইপাড়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার ও দীপঙ্কর দে।

দুর্ঘটনা ঘটে। ভুগতে হয় সাধারণ মানুষ থেকে পথচারীদের। কিন্তু যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা নির্বিকার। আর প্রশাসনের এই মনোভাব নিয়েই উষ্মা, অভিযোগ মানুষের।

রাস্তার উপর অবাধে ইমারতির জিনিস ফেলে রাখার কারণে বৃহস্পতিবারই শ্রীরামপুরে দুঘর্টনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক পথচারী। এ ভাবে দুর্ঘটনার জন্য প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই বার্তা যে জেলার অন্য এলাকাগুলিতে পৌঁছয়নি শুক্রবার নানা জায়গায় ঘুরে তারই প্রমাণ পাওয়া গেল। দেখা গেল রাজপথ থেকে গলি—সব জায়গাতেই রাস্তা আটকে ফেলা রয়েছে বালি, স্টোনচিপস, ইট।

বাঁশবেড়িয়া থেকে পান্ডুয়া, চাঁপদানি থেকে বৈদ্যবাটি, বড়া থেকে কানাইপুর, বারুইপাড়া—সব জায়গাতেই একই ‘ব্যাধি’। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাড়ির চাকায় বালি, পাথর গোটা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষত, দু’চাকার গাড়ির পক্ষে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। মাসখানেক আগেই বাঁশবেড়িয়ার ঝুলনিয়া মোড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা বালির কারণে দু’টি গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আদিসপ্তগ্রাম রেলস্টেশনের কাছে একটি প্রাথমিক স্কুলের সামনেও একই ভাবে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা হয়। কোথাও কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার এতটুকু ইঙ্গিত নেই বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানান। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ-পুরসভাকে জানিয়েও লাভ হয় না। কারণ যারা এ সব করে তাদের মাথার উপর রাজনীতির ছাতা ধরা। বাঁশবেড়িয়া পুর এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘স্থানীয় কাউন্সিলারকে জানাতে গিয়ে ‘একটু মানিয়ে নিন’ এমন কথাও শুনতে হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ঠুঁটো পুলিশ-পুরসভার জন্যই বেপরোয়া ইমারতির ব্যবসায়ীরা।

আদিসপ্তগ্রামের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী সঞ্জীব গোস্বামী বলেন, ‘‘সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করি। যে ভাবে রাস্তার ধারে বালি, পাথর ফেলে রাখা হয় তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।’’

ঝুলনিয়া মোড়ের বাসিন্দা রাজেন্দ্রকুমার সাউয়ের আবার বক্তব্য, ‘‘গঙ্গা থেকে সাদা বালি তুলে রোজ প্রচুর ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু ট্রাকে ঢাকা থাকে না। ফলে বালি রাস্তায় পড়তে পড়তে যায়, যা কম বিপজ্জনক নয়। কিন্তু কে নজর দেবে?’’ বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান অরিজিতা শীলের অবশ্য দাবি, ‘‘বালির ট্রাক ত্রিপল দিয়ে ঢেকেই যায়। কারও কোনও অসুবিধা হয় না। আর সাধারণত রাস্তায় বালি, পাথর পড়ে থাকে‌ না।’’ পুলিশের বক্তব্য, বালি রাখা নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সব শুনে ওই সব বাসিন্দাদের অনেকে জানান, অভিযোগ করলে পাছে ‘স্থানীয় রাজনৈতিক দাদাদের’ কোপে পড়তে হয় তাই অনেকেই অভিযোগ করেন না। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, এটা বেআইনি জেনেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেয় না কেন?

রাস্তা জুড়ে ফেলে রাখা ইমারতি দ্রব্য যে যানজট এবং দুর্ঘটনার বড় কারণ, তা জেলার পুলিশ আধিকারিকরাও মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের যুক্তি, পুরসভা বা পঞ্চায়েত এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না করায় তাঁদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। সাধারণ মানুষও কার্যত মুখ বুজে থাকেন। কেবল দুর্ঘটনা ঘটলে হইচই হয়।

তবে পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করে না এমন অভিযোগ মানতে নারাজ হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কেউ রাস্তাজুড়ে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখলে পুরসভা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’’

Policeman Businessman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy