Advertisement
E-Paper

ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন হাওড়ায়

ঘনবসতিপূর্ণ একটা গলির মধ্যে দিয়ে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন এক যুবক। আচমকা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে পথ আটকে দাঁড়াল উল্টো দিক থেকে মোটরবাইকে আসা দুই দুষ্কৃতী। এর পরেই যুবককে পয়েন্ট ব্ল্যাক রেঞ্জ থেকে দু’টি গুলি চালিয়ে বাইক নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৯

ঘনবসতিপূর্ণ একটা গলির মধ্যে দিয়ে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন এক যুবক। আচমকা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে পথ আটকে দাঁড়াল উল্টো দিক থেকে মোটরবাইকে আসা দুই দুষ্কৃতী। এর পরেই যুবককে পয়েন্ট ব্ল্যাক রেঞ্জ থেকে দু’টি গুলি চালিয়ে বাইক নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার রামরাজাতলার অরবিন্দ রোডের বক্সি বাগানে। দিনে দুপুরে এই ঘটনা হাওড়া শহরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, দুপুর বেলা এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খুন করার পরও দুষ্কৃতীরা বেমালুম পালিয়ে গেল কী করে? কেনই বা এলাকায় পুলিশের নজরদারি সে সময় চোখে পড়েনি? কেনই বা রাত পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনায় দুষ্কৃতীদের একজনকেও গ্রেফতার করতে পারলো না? যদিও পুলিশের দাবি, ঘটনার পর দ্রুত পুলিশ পৌঁছেছিল। খুব শীঘ্রই অপরাধীরা ধরা পড়বে।

নিহত ওই যুবকের নাম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় (৪২)। তিনি ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ ও ছাঁট লোহা সরবরাহের ব্যবসা করতেন। এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে স্থানীয় কামারডাঙায় বন্ধুর ইট-বালি-সিমেন্টের গোলায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে বক্সিবাগানে একটি ইরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায় মোটরবাইক আরোহী দুই যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটে তার পাশেই চারতলা স্কুলটিতে তখন ক্লাস চলছিল। রাস্তাতেও কয়েক জন পথচারী ছিলেন। তাঁদের চোখের সামনেই ওই দুই দুষ্কৃতী কিছু বুঝে ওঠার আগে গৌতমবাবুর বুকের বাঁ দিকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পরপর দু’টি গুলি চালিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মোটরবাইক সমেত পড়ে যান। হেলমেট ছিটকে পড়ে। বাইক নিয়ে কামারডাঙার দিকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতী। পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও ওই যুবক কোনও রকমে হেঁটে এগিয়ে গিয়েছিলেন সামনেই একটা নার্সিং হোমের কাছে। কিন্তু নার্সিং হোমে ঢোকার আগেই গেটের সামনে পড়ে যান তিনি। যুবককে ওই অবস্থায় পড়ে যেতে দেখে নার্সিং হোম কতৃর্পক্ষই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ওই যুবককে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

এ দিকে এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসেন ডিসি ডিডি সুমিত কুমার সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা। পুলিশ আসার পর স্কুল ছুটি দিয়ে পড়ুয়াদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বেলা দেড়টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে তা যথেষ্ট জনবহুল। সামনেই রামরাজাতলা বাসস্ট্যান্ড, বাজার ও মন্দির। বেলা সাড়ে ১২টার সময় স্বাভাবিক ভাবেই লোকজন যথেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেও এই ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িছে বাসিন্দাদের মধ্যে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে এমন ঘটনা এই এলাকায় ঘটেনি। ৃ সম্প্রতি জমি-বাড়ি দালালি ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে এলাকায় রীতিমত সিন্ডিকেট ব্যবসা শুরু হয়েছে। আমাকেও বাড়ি করতে গিয়ে একটি ক্লাবকে মোটা টাকা দিতে হয়েছে।’’ রামরাজাতলা-কামারডাঙা এলাকায় জমি-বাড়ির দালালি এবং ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়েই যে এই খুন তা প্রাথমিক তদন্তের পর মানছে হাওড়া সিটি পুলিশ। কারণ পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকায় সিন্ডিকেট রাজ কায়েম নিয়েই ওই যুবকের সঙ্গে স্থানীয় একটি ক্লাবের গত কয়েক মাস ধরে বিবাদ চলছিল। মাঝখানে দু’পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের গোলমালও হয়েছিল। তারই বদলা নিয়ে এই খুন কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসিডিডি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে গোলমালের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্ত চলছে এখনই পরিষ্কার ভাবে সব বলা যাবে না। আশা করি খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।’’ কিন্তু দিনে দুপুরে এই ঘটনা কী পুলিশি নজরদারির অভাব প্রমাণ করে না? ডিসি ডিডি বলেন, ‘‘হাওড়া শহরে লক্ষ লক্ষ লোক বাস করেন। তাঁদের প্রত্যেককে নিরাপত্তা দেওয়া কী সম্ভব? পুলিশ তো প্রত্যেক অলিগলিতে নজরদারি চালাতে পারে না। তবে আমরা চেষ্টা করি। এ জন্যই শহরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’

Businessman Miscreants Howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy