Advertisement
E-Paper

বাইরে নীল-সাদা, চাঙড় খসে ক্লাসে

নীল-সাদা বাড়িটির ভিতরে ঢুকলে অবশ্য আঁতকে ওঠার পালা— একাধিক জায়গায় ভেঙে পড়ছে ছাদ। পরিস্থিতি এমনই যে দু’টি ক্লাস করতে হয় একটি ঘরে।

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০১:৪১
বিপজ্জনক: চাঙড় খসা ঘরের হাল এমনই (উপরে) বাইরে রঙে সেজেছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: চাঙড় খসা ঘরের হাল এমনই (উপরে) বাইরে রঙে সেজেছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র

তিন মাস আগে রং করা প্রাথমিক স্কুলের বাড়ি ঝকঝকে চেহারায় দাঁড়িয়ে। নীল-সাদা বাড়িটির ভিতরে ঢুকলে অবশ্য আঁতকে ওঠার পালা— একাধিক জায়গায় ভেঙে পড়ছে ছাদ। পরিস্থিতি এমনই যে দু’টি ক্লাস করতে হয় একটি ঘরে। কোনও মতে চালানো হয় মিড-ডে মিল। শিক্ষিকাদের ঘরেও যে কোনও সময় ছাদ ভেঙে ঘটতে পারে বিপর্যয়।

বাঁশবেড়িয়া সরকারি পল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমনই হাল যে গত এক বছরে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আগে আমরা ইট ভাটা, রেল বস্তি থেকে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে এসে ভর্তি করতাম। এখন আর করি না। পড়াতে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে তো বিপদে ফেলতে পারি না।’’

কেন এমন দশা?

সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ওই প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ঝর্না কুণ্ডু বলেন, ‘‘গত বছরে মার্চ মাসে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস চলার সময়ই ঘরের ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়েছিল। কোনও ক্রমে রক্ষা পেয়েছিল বাচ্চারা। তারপর থেকে সমানেই খারাপ হচ্ছে ছাদের অবস্থা।’’ ঝর্নাদেবীর দাবি, ২০১৭ সাল থেকে তিনি হুগলির জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বাঁশবেড়িয়া পুরসভা, মগরার বিডিও-সহ সমস্ত সরকারি দফতরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বাড়ি মেরামত করার জন্য। লাভ হয়নি।

কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও ই-মেল মারফত বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঝর্নাদেবী। কিন্তু উত্তর এখনও পাননি। রাজ্যের মন্ত্রী ও এলাকার বিধায়ক তপন দাশগুপ্তও বিষয়টি জানেন। কয়েক মাস আগে তিনি পরিস্থিতি দেখে গিয়েছেন। তবে কাজ হয়নি।

বিপজ্জনক: চাঙড় খসা ঘরের হাল এমনই (উপরে) বাইরে রঙে সেজেছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র।

এ বছর মার্চ মাসে পুরসভার তরফ থেকে নীল-সাদা রং করে দেওয়া হয় স্কুলবাড়ির বাইরের অংশে। ভিতরে মেরামতি বা ছাদ সংস্কারের কথা ভাবেননি কর্তৃপক্ষ। ফলে বিপদ মাথায় নিয়েই স্কুল চালিয়ে যান পাঁচ জন শিক্ষিকা। তাঁরা জানিয়েছেন, মোট ছ’টি পাকা ঘর রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে তিনটি ঘরেই ভেঙে পড়ছে ছাদ। সামান্য বৃষ্টি হলেই জল পড়ে ক্লাসের ভিতরে। বাধ্য হয়ে তাই এক একটি ঘরে দু’টি করে ক্লাসের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। বিপদ মাথায় নিয়ে বসে থাকেন শিক্ষিকারা।

অভিযোগ, স্কুলের এমন অবস্থার কারণেই গত এক বছরে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে পড়ুয়ার সংখ্যা। হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১০৩ জন। ২০১৭ সালে ছিল ১০৪ জন। সেখানে এ বছর মাত্র ৬৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে চাইছেন না শিক্ষিকারাও।

স্কুলের অবস্থার কথা জানেন জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক গোপাল বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল বাড়ি মেরামতির কথা আমাকে ২০১৬ সালেই জানানো হয়েছিল। জানি, পুরো ছাদটাই মেরামত করতে হবে। কিন্তু ওই স্কুলের জন্য বরাদ্দ আসেনি।’’ তাঁর দাবি, আপাতত এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ৩২টি স্কুলের জন্য। তার মধ্যে ওই স্কুলের নাম নেই। পরবর্তী পর্যায়ে স্কুল মেরামতির জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও ছাদ সারানো হবে।

কিন্তু ছাদ মেরামত না করে বাইরে থেকে রং করে দেওয়া হল কেন?

গোপালবাবুর দাবি, ‘‘ওই প্রকল্পে পুরসভা বা পঞ্চায়েতগুলির উপর দায়িত্ব পড়েছিল সব স্কুলের বাইরের দেওয়াল রং করে দেওয়ার। সেই অনুযায়ী বাঁশবেড়িয়া পুরসভা
কাজ করেছে।’’

School Student Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy