Advertisement
E-Paper

বাহিনীর তাড়া, পাঁচিল টপকে পালাল তৃণমূল

আগের কয়েকটি দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কখনও দেখা গিয়েছে ঠায় বসে থাকতে। কখনও বাজার ব্যাগ হাতে। প্রশ্ন উঠেছে বুথ পাহারায় থাকা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। এমনকী ভোটারদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

শমীক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৩

আগের কয়েকটি দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কখনও দেখা গিয়েছে ঠায় বসে থাকতে। কখনও বাজার ব্যাগ হাতে। প্রশ্ন উঠেছে বুথ পাহারায় থাকা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। এমনকী ভোটারদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

ফের সেই একই ছবির কি পুনরাবৃত্তি ঘটবে সোমবার? তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া পূর্ব, উলুবেড়িয়া উত্তর, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ, পাঁচলা কেন্দ্রের ভোটাররা। মনে দোটানা নিয়ে সকাল সকাল ভোট দিতে বেরোতেই আশঙ্কার মেঘ দূরে সরে যেতে থাকে। কোলে বাচ্চা নিয়ে বা়ড়ির মহিলা থেকে থেকে শুরু করে বয়স্কদেরও বুথমুখো হতে দেখা যায়। কোথাও কেউ কোনও রকম হুমকি বা বাধার মুখে পড়েছেন বলে শোনা যায়নি। কারণ, ওলিগলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশকে টহল দিতে দেখা গিয়েছে। কোনও রকম অভিযোগের কথা তাদের কানে পৌঁছলে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে ভোটাররা জানালেন। এই সব এলাকায় ঘুরে ভোটারদের কথার সঙ্গে মিলও পাওয়া গেল।

দৃশ্য ১: হাওড়া গ্রামীণের যে এলাকা আলোচনার সব থেকে মূলে ছিল— সেই উলুবেড়িয়া উত্তর তথা তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজির কেন্দ্র একেবারে শান্ত। তাঁর দাপট আগে যেমন দেখা গিয়েছিল, ভোটের দিন তার সিকি ভাগও দেখা যায়নি। তাঁকে তাঁর কেন্দ্র এলাকায় বিকেল পর্যন্ত দেখা যায়নি বললেই চলে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এই কেন্দ্রের বাসুদেবপুর অঞ্চলে গিয়ে কোনও গোলমালের আঁচ পাওয়া যায়নি। ভোটাররা যে যাঁর মতো বুথে যাচ্ছেন আর বাড়ি ফিরছেন। তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ নেই। ভোট কেমন হচ্ছে জানতে একটা জটলার কাছাকাছি দাঁড়িয়েছিলাম। ওই জটলায় যুবকদের কথাবার্তা শুনে মনে হল, তাঁরা তৃণমূলের লোকজন। তাঁরা প্রার্থীর হয়ে কাজ যে করছেন না, তা তাঁদের কথাতেই বোঝা গেল। কারণ, এক জনকে বলতে শোনা গেল, ‘নির্মল মাজি এই এলাকা থেকে আড়াই হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকবে।’ সঙ্গে সঙ্গে আর এক জন বললেন, ‘এত খারাপ ব্যবহার। ওই জন্য দলকে বলেছিলাম তাঁকে প্রার্থী না করতে। কেউ কথা শুনল না। তাই আমাদেরও কেউ নামেনি।’ একই রকম পরিস্থিতি বাণীবন, জুয়ারগোড়ি, কাঁটাবেড়িয়া এলাকায়ও। ওই দলের দাদা গোছের এক জন যোগ করলেন, ‘সকালে কিছুক্ষণ চন্দ্রপুর ও ভাণ্ডারগাছিতে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সেখানে ছিলেন প্রার্থী। কিন্তু বাহিনী ও পুলিশের সদর্থক ভূমিকার জন্য সুবিধা করতে পারেননি।’

দৃশ্য ২: সাড়ে ১১টা। অভিযোগ আসে, উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বাউড়িয়া এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের বুথে তৃণমূল প্রার্থী হায়দর আজিজ সফি ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সেখানে গিয়ে জানা গেল, কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রার্থীকে বলেছে, বুথ থেকে বেরিয়ে যেতে।

দৃশ্য ৩: দুপুর সাড়ে ১২টা। উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের পশ্চিম বাউড়িয়া এলাকা। দেখলাম, আমিনা বিবি নামে এক মহিলা পিএইচ-এর জল না নিয়ে অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘‘এত দুর্গন্ধ এই জল পশুরাও খায় না। পুরভোটে জেতার আগে তৃণমূল বলেছিল বাড়ি বাড়ি ভাল জল পৌঁছে দেবে। এই তার নমুনা। আমরা এখনও সেই নলকূপ থেকে জল বয়ে আনছি।’’ ভোট দিয়েছেন? ‘‘ভাবছি।’’ তাঁর ক্ষোভ হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, ওই এলাকায় কোনও কাজই হয়নি।

দৃশ্য ৪: দুপুর ১.৩০। কেন্দ্র পাঁচলা। কাঠবেড়িয়া জুনিয়র বেসিক স্কুলে বুথ হয়েছে। থানায় অভিযোগ উড়ে এল ‘রিগিং’ হচ্ছে। খবর পেয়ে গিয়ে দেখা যায়, ১০-১২ জনের বেশি ভোটার নেই ওই বুথে। রিগিং-এর কোনও ছবি ধরা পড়েনি। নজরে শুধু এল— ওই বুথ থেকে কিছুটা দূরে আছে ফব প্রার্থী ডলি রায়ের ক্যাম্প। ক্যাম্পে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হল, গিরিং-এর অভিযোগ এখান থেকে হয়েছিল? উত্তর এল, না। এজেন্ট করে থাকতে পারে। কেন করলেন? কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দৌড় করাতে। কিন্তু এই দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ ভাল ভূমিকা নিয়েছে। ভোটাররাও একই কথা বলছেন। তিনি বললেন, ‘‘এলাকায় মাঝে মধ্যে তৃণমূলের লোকজনকে জটলা করতে দেখা যাচ্ছে। তারা যাতে গোলমাল পাকাতে না পারে সে জন্য এটা করতে হয়েছে।’’

দৃশ্য ৫: শুধু বিরোধীরাই নয়। তৃণমূলের লোকেরাও ভুয়ো অভিযোগ তুলে বাহিনী এবং পুলিশকে দৌড় করাচ্ছেন, সেই চিত্র উঠে এল ফরিকপাড়া এলাকায়। দুপুর ২.৩০ নাগাদ ফকিরপাড়া থেকে পাঁচলা থানায় অভিযোগ এল, টিএমসির কেউ ভোট দিতে যেতে পারছে না। পুলিশ ফোনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে খবর দিল। তারা গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করালো। তবে ২টোর একটু আগে জয়রামপুর কুশডাঙা এলাকায় তৃণমূলের লোকেরা বুথের সামনে ভিড় করেছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাড়া থেকে তাদের পাঁচিল টপকে পালাতে দেখা যায়।

বাহিনী ও পুলিশের এই ভূমিকা প্রসঙ্গে বিরোধী প্রার্থী সাবিরউদ্দিন মোল্লা (উলুবেড়িয়া পূর্ব), অমীয় মণ্ডল (উলুবেড়িয়া উত্তর) বলেন, ‘‘বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় আমরা খুশি। আমাদের ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে।’’ অমীয়বাবু যোগ করলেন, ‘‘চন্দ্রপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীয় থেকে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ভাল ছিল।’’

নির্মল মাজির সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায় বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। তবে এ বারের নির্বাচন বিরোধীদের সঙ্গে নয়, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে।’’

assembly election 2016 election central force tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy